ছিন্ন মুকুল
– সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

সবচেয়ে যে ছোট্ট পিঁড়িখানি
সেইখানি আর কেউ রাখে না পেতে,
ছোট থালায় হয় নাকো ভাত বাড়া,
জল ভরে না ছোট্ট গেলাসেতে;
বাড়ির মধ্যে সবচেয়ে যে ছোট
খাবার বেলায় কেউ ডাকে না তাকে,
সবচেয়ে যে শেষে এসেছিল
তারি খাওয়া ঘুচেছে সব আগে।

সবচেয়ে যে অল্পে ছিল খুশি
খুশি ছিল ঘেঁষাঘেঁষির ঘরে,
সেই গেছে হায়, হাওয়ার সঙ্গে মিশে
দিয়ে গেছে জায়গা খালি করে।
ছেড়ে গেছে পুতুল, পুঁতির মালা,
ছেড়ে গেছে মায়ের কোলের দাবি;
ভয়-তরাসে ছিলো যে সবচেয়ে
সেই খুলেছে আঁধার ঘরের চাবি।

হারিয়ে গেছে- হারিয়ে গেছে, ওরে!
হারিয়ে গেছে বোল্-বলা সেই বাঁশি,
হারিয়ে গেছে কচি সে মুখখানি,
দুধে-ধোওয়া কচি দাঁতের হাসি।
আঁচল খুলে হঠাৎ স্রোতের জলে
ভেসে গেছে শিউলি ফুলের রাশি,
ঢুকেছে হায় শ্মশান ঘরের মাঝে
ঘর ছেড়ে তাই হৃদয় শ্মশান-বাসী।

সবচেয়ে যে ছোট কাপড়গুলি,
সেগুলি কেউ দেয় না মেলে ছাদে;
যে শয্যাটি সবার চেয়ে ছোট
আজকে সেটি শূন্যে পড়ে কাঁদে,
সব-চেয়ে যে শেষে এসেছিলো
সে গিয়েছে সবার আগে সরে,
ছোট্ট যে জন ছিলো রে সব চেয়ে
সে দিয়েছে সকল শূন্য করে।