নাসিরুদ্দিন হোজ্জার গল্প
লবণ দিয়ে খাই
হোজ্জা আর তার এক বন্ধু একবার এক হোটেলে ঢুকল কিছু খাওয়ার জন্য। খাওয়া শেষে হিসাব করে দেখল যে, দুই গ্লাস দুধ খাওয়ার মতো টাকা ওদের হাতে নেই। তাই দুজনের জন্য এক গ্লাস দুধ চাইল। দুধ আসার পর হোজ্জার বন্ধুটি বলল, ‘ভাই, তুমি আগে অর্ধেকটা খেয়ে ফেল।
হোজ্জা জানতে চাইল, ‘কেন?’
বন্ধুটি বলল, ‘আমি আবার চিনি ছাড়া দুধ খেতে পারি না। অথচ, একজনের খাওয়ার মতোই চিনি আছে আমার কাছে। তাই বলছিলাম যে, তুমি অর্ধেকটা খেয়ে নিলে বাকিটা আমি চিনি দিয়ে খাব।’
হোজ্জা তখন গ্লাসটা হাতে নিয়ে তার মধ্যে অনেকটা লবণ ঢেলে বলল, ‘তাহলে আমার অর্ধেক ভাগটা আমি লবণ দিয়ে খেয়ে নিলাম। বাকিটা তুমি চিনি মিশিয়ে মিষ্টি করে খেয়ো!’
সবই একবারে এনেছি
মোল্লা এক বাড়িতে চাকরের কাজ করছে। মনিব তাকে ডেকে বললেন, ‘তুমি অযথা সময় নষ্ট কর কেন, তিনটা ডিম কিনতে কেউ তিনবার বাজারে যায়? এবার থেকে সব কাজ একবারে সেরে আসবে।’
একদিন মনিব অসুখে পড়লে মোল্লাকে বললেন ডাক্তার ডাকো। মোল্লা গেল কিন্তু ফিরলো অনেক দেরিতে আর সাথে অনেক লোক।
মনিব বললেন, ‘ডাক্তার কই?’
তিনি আছেন সাথে আরো অনেকে আছেন, বললো মোল্লা।
– আরো কেন?
– আজ্ঞে ডাক্তার বললো পুলটিশ দিতে লোক চাই। জল গরম করতে কয়লা লাগবে, কয়লাওয়ালা চাই। আপনি যদি মারা যান তো দোয়া পড়ার লোক চাই। আপনাকে কবর দেওয়ার লোক চাই, আপনি মরলে পরে লাশ বইবার লোক চাই। তাই সবই একবারে এনেছি।
বিড়ালে সব মাংস খেয়ে ফেলেছে
হোজ্জা এক কেজি মাংস কিনে এনে গিন্নিকে দিলেন রান্না করতে দিয়ে বলল- ”মাংস গুলো রান্না কর, আমি গোসল করে আসছি”
গিন্নি মাংস রান্না করতে গিয়ে একটু একটু টেস্ট করতে করতে সব মাংস খেয়ে ফেললো।
হোজ্জা নদী থেকে গোসল সেরে এসে খেতে বসে মাংস না দেখে জিজ্ঞাসা করলে গিন্নি জানালো, বিড়ালে সব মাংস খেয়ে ফেলেছে।
হোজ্জা তাড়াতাড়ি বিড়ালটাকে ধরে ওজন করে দেখলেন যে সেটার ওজন এক কেজি। গিন্নিকে তখন বললেন, ‘এটা যদি বিড়াল হয় তবে মাংস কোথায়, আর এটা যদি মাংস হয় তবে বিড়ালটা কোথায়?
অর্ধেক ভাগ
একবার হোজ্জা বাদশাহর জন্য কিছু উপহার নিয়ে যাচ্ছিল। গেটে প্রহরী হোজ্জাকে আটকে দিল। বলল, তোমার উপহার আমাকে দাও, আমিই জাঁহাপনাকে দিয়ে আসব। কিন্তু হোজ্জা নিজেই উপহার দিয়ে আসতে চায়। এদিকে প্রহরীও নাছোড়বান্দা। শেষ পর্যন্ত হোজ্জা বলল, ‘ঠিক আছে, আমি ভিতরে গিয়ে বাদশাহরকাছ তেকে যা বখশিশ পাব, তার অর্ধেক তোমাকে দিয়ে দিব।’ একথা শুনে প্রহরী হোজ্জাকে ভিতরে যেতে দিল।
হোজ্জা দরবারে গিয়ে বাদশাহকে উপহার দেওয়ার পর বাদশাহ খুব খুশি হলেন এবং হোজ্জাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তার কী চাই?
হোজ্জা বলল ৫০ ঘা বেত্রাঘাত!
দরবারের সবাই তো অবাক! এ কেমন উপহার চাওয়া?
বাদশাহ যতই অন্য উপহার দিতে চান, হোজ্জা ততই বেতের বাড়ি নিতে চায়।
মহা মুসিবত। শেষ পর্যন্ত হোজ্জার জেদের কাছে হেরে গিয়ে বাদশাহ নির্দেশ দিলেন হোজ্জাকে বেত মারার।
২৫ ঘা বেত মারার পর হোজ্জা থামতে বলল। তারপর বাদশাহর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘জাঁহাপনা, আমার পুরস্কারের একজন ভাগীদার আছে।’
বাদশাহ জানতে চাইলেন, ‘কে?’
তখন হোজ্জা দরবারে আসার পথে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। পুরো ঘটনা জানার পর বাদশাহ তখন ঐ প্রহরীকে ডেকে আচ্ছাসে বেত্রাঘাত করে তার পাওনা মিটিয়ে দিলেন।
আপয়া যে কে, সেটা বুঝতে পারলেন না
শিকারে বেরিয়ে পথে প্রথমেই নাসিরুদ্দীনের সামনে পড়ে রাজামশাই খেপে উঠলেন।
লোকটা অপয়া। আজ আমার শিকার পণ্ড- ”ওকে চাবকে হটিয়ে দাও”
রাজার হুকুম তামিল হল।
কিন্তু শিকার হলো জবরদস্ত। রাজা শিকার থেকে ফিরে নাসিরুদ্দীনকে ডেকে পাঠালেন, বললেন- ‘ভুল হয়ে গেছে মোল্লা। আমি ভেবেছিলাম তুমি অপয়া। এখন দেখছি তা নও”
নাসিরুদ্দীন তিন হাত লাফিয়ে উঠে জবাব দিল- ”আপনি ভেবেছিলেন আমি অপয়া? আমায় দেখে আপনি ২৬টি হরিণ মারলেন, আর আপনাকে দেখে আমি ২৬ ঘা চাবুক খেলাম। আপয়া যে কে, সেটা বুঝতে পারলেন না?”
পোশাকটি আসলে আমার
হোজ্জার বাড়িতে এক বন্ধু এসেছেন বেড়াতে। সন্ধ্যায় প্রতিবেশীদের সাথে পরিচয় করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় হোজ্জা নিজের একটি ভালো পোশাক ধার দিলেন।
প্রথম বাড়িতে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় এও জানালেন, ‘এর গায়ে যে পোশাকটি দেখছেন, তা আসলে আমার।’ সেখান থেকে বেরিয়ে বন্ধু মহা ক্ষ্যাপা। ‘কী দরকার ছিল ওটা বলে আমাকে অপমান করার?’ হোজ্জা ক্ষমা চাইলেন।
দ্বিতীয় বাড়িতে গিয়ে বললেন, ‘এর গায়ে যে পোশাকটি দেখছেন, তা আসলে এরই।’
এবার তো বন্ধু আরো ক্ষ্যাপলেন। ‘পোশাকটি নিয়ে তুমি কিছু না বলাই ভালো।’
তৃতীয় বাড়িতে গিয়ে হোজ্জা বললেন, ‘ইনি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এর গায়ে যে পোশাকটি দেখছেন, সে সম্পর্কে কিছু না বলাই ভালো!’
আরও হাসির গল্প পড়তে ক্লিক করুন।
আমাদের Youtube চানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন।