বিয়ে বাড়ির মজা
কবি- সুকান্ত ভট্টাচার্য

বিয়ে বাড়ি : বাজছে সানাই, বাজছে নানন বাদ্য
একটি ধারে তৈরি হচ্ছে নানারকম খাদ্য ;
হৈ-চৈ আর চেঁচামেচি, আসছে লুচির গন্ধ,
আলোয় আলোয় খুশি সবাই, কান্নাকাটি বন্ধ,
বাসরঘরে সাজছে ক’নে, সকলে উৎফুল্ল ,
লোকজনকে আসতে দেখে কর্তার মুত খুলল :
“আসুন, আসুন – বসুন সবাই, আজকে হলাম ধন্য,
যৎসামান্য এই আয়োজন আপনাদেরই জন্য
মাংস, পোলাও, চপ-কাটলেট, লুচি এবং মিষ্টি
খাবার সময় এদের প্রতি দেবেন একটূ দৃষ্টি।”
বর আসে নি, তাই সকলে ব্যস্ত এবং উৎসুক,
আনন্দে আজ বুক সকলের নাচছে কেবল ধক্-ধুক্,
‘হুল’ দিতে তৈরি সবাই, শাঁখ হাতে সূব প্রস্ত্তত,
সময় চলে যাচ্ছে ব’লে মনটা করছে খুঁত-খুঁত।
ভাবছে সবাই কেমন ক’রে বরকে করবে জব্দ ;
হঠাৎ পাওয়া গেল পথের মোড়ে গাড়ির শব্দ :
হুলুধ্বনি উঠল মেতে, শাঁখ বাজলো জোরে,
বরকে সবাই এগিয়ে নিতে গেল পথের মোড়ে,
কোথায় বরের সাজসজ্জা ? কোথায় ফুলের মালা ?
সবাই হঠাৎ চেঁচিয়ে ওঠে, পালা, পালা, পালা।
বর নয়কো, লাল-পাগড়ী পুলিশ আসছে নেমে।
বিয়েবাড়ির লোকগুলো সব হঠাৎ উঠল ঘেমে,
বললে পুলিশ : এই কি কর্তা, ক্ষুদ্র আয়োজন ?
পঞ্চাশ জন কোথায় ? এ যে দেখছি হাজার জন !
এমনি ক’রে চাল নষ্ট দুর্ভিক্ষের কালে ?
থানায় চলো, কাজ কি এখন এইখানে গোলমালে ?
কর্তা হলেন কাঁদো-কাঁদো, চোখেতে জল আসে,
গেটের পাশে জড়ো-হওয়া কাঙালীরা হাসে।।

 


আরও পড়ুন – মিঠেকড়া / সুকান্ত ভট্টাচার্য