চৌদ্দ

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার সমর সেনের সঙ্গে রাজ্জাক স্যারের একরকম হৃদ্যতা ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকার সময়ে। সমরবাবু হয়তো স্যারের ছাত্র কিংবা ছাত্রস্থানের ছিলেন। বোধ করি সমর সেন বাংলাদেশে নিয়োগপ্রাপ্ত দুনম্বর ভারতীয় হাই কমিশনার। সুবিমল দত্তের পরে সমরবাবু ঢাকায় পোস্টিং পেয়েছিলেন। সমরবাবুর বাড়িতে স্যারের পরিবারের যেমন যাওয়া-আসা ছিলো, তেমনি ভারতীয় হাই কমিশনারও নানা উপলক্ষে স্যারের বাড়িতে আসতেন। সেদিন ন’টা সাড়ে ন’টার সময় স্যারের বাড়িতে গিয়ে দেখি সরগরম অবস্থা। কাজের লোকেরা ঘরবাড়ি, আলমারি, চেয়ার, টেবিল, বইয়ের শেলফ ঘষে ঘষে পরিষ্কার করছে। বাড়ির মেয়েরাও ওই পরিচ্ছন্নতা অভিযানে যোগ দিয়েছে। স্যারের ভ্রাতুষ্পপুত্রীকে জিগ্‌গেস করলাম, খুব তো তোড়জোড় চলছে, উপলক্ষটা কী?

সে আমাকে জানালো, আজ ভারতীয় হাইকমিশনার এবং তাঁর বেগম দুপুরে খেতে আসবেন।

স্যার কোথায় জিগ্‌গেস করলে সে আমাকে রান্নাঘর দেখিয়ে দিলো।

আমি রান্নাঘরের সামনে এসে দেখি হ্যার হেলু চাচিকে নির্দেশ দিচ্ছেন। হেলু চাচি কাজের লোকদের পাল্টা নির্দেশ দিচ্ছেন। খুব ব্যস্ত-ব্যস্ত ভাব। চুলাতে কড়াই উঠছে এবং চুলা থেকে কড়াই নামছে। ছ্যাঁত ছোঁত শব্দ হচ্ছে। রান্নাঘরের গরমে স্যার ঘেমে গেছেন। তার মুখে বড় বড় ঘামের ফোটা। আমাকে দেখে স্যার হাসলেন এবং জিগ্‌গেস করলেন, মৌলবি আহমদ ছফা, রান্নাবান্না করতে জানেন?

আমি মাথা নেড়ে জানালাম, কিছুই জানি না।

স্যার মন্তব্য করলেন, তা অইলে আপনে কোনো কামে আইবেন না। যান বয়েন।

হেলু চাচি বললেন, মেজোভাই, আপনিও একটু বিশ্রাম করেন গিয়ে, বাকিটা আমরা সারতে পারবো।

স্যারের সঙ্গে আমি ড্রয়িংরুমে চলে এলাম। স্যার বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে এলেন। ছোকরা চাকরিটা তামাক দিয়ে গেল। স্যার হুঁকোতে টান দিয়ে জিগ্‌গেস করলেন, মৌলবি আহমদ ছফা, আপনে রান্নাবান্নার কোনো খবরটবর রাখেন?

আমি বললাম, না স্যার, কোনো খবর রাখিনে। স্যার বললেন, যে জাতি যত সিভিলাইজড তার রান্নাবান্নাও তত বেশি সফিস্টিকেটেড। আমাগো ইস্টার্ন রান্নার সঙ্গে পশ্চিমাদের রান্নার কোনো তুলনাই অয় না। অরা সভ্য অইছে কয়দিন। এই সেদিনও তারা মাছ মাংস কাঁচা খাইত।

স্যার গ্যাস্ট্রোনমির ওপর একটা সুদীর্ঘ বক্তৃতা দিলেন। তার অনেক কিছুই আমার মনে নেই। মুসলমানেরা যেসব খাওয়াদাওয়া ভারতে চালু করেছে ভাসাভাসা তার দুয়েকটা মনে আছে। চীনা খাবার, ভারতীয় খাবার, আরবদের এবং ইউরোপীয়দের খাবারের বৈশিষ্ট্য নিয়ে সেদিন আলোচনা করেছিলেন এবং প্রাকৃতিক কারণও ব্যাখ্যা করেছিলেন। রান্নাবান্না এবং খাদ্যদ্রব্য সম্পর্কে আমার কোনো আগ্রহ না থাকায় স্যারের আলচনা আমার মনে স্থান করে নিতে পারেনি।

টেলিফোনে কার সঙ্গে কথা বললেন। রিসিভার রেখে বললেন, বদরুদ্দীন উমর। হেরেও আইবার কইছিলাম। হে কয় তার অন্য কাম আছে। তারপরে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনে কোনোদিন বদরুদ্দীন উমরের বউয়ের বাংলা উচ্চারণ শুনছেন নিহি?

আমি বললাম, না, আমি শুনিনি।

এক্কেরে বিশুদ্ধ বাংলা কয়, উচ্চারণ নিখুঁত। আপনেগো উচিত। তার বাংলা পাঠ ক্যাসেট কইরা রাখা। পরে খুব কামে আইব।

আমি বললাম, আপনি ত স্যার ঢাকার বাংলা বলেন, আমাদেরকে কেনো পশ্চিম বাংলার উচ্চারণরীতিটা অনুসরণ করতে বলছেন?

স্যার কথাটা পাশ কাটিয়ে গেলেন। তারপর তিনি একজন সাহেবের নাম উচ্চারণ করলেন, আমি এখন মনে করতে পারছি না। সেই সাহেব নাকি একশো বছর আগে লিখে গিয়েছেন, বেঙ্গলে ঢাকা জেলার মানুষেরা বিশুদ্ধ বাংলায় কথাবার্তা কয়। এই ফাঁকে স্যার আরেকবার তামাক দিতে বললেন। হুঁকো টানতে টানতে বললেন, বাংলা ভাষার মধ্যে যে পরিমাণ এলিট (elite) মাস (mass) গ্যাপ এইরকম দুনিয়ার অন্য কোনো ভাষার মধ্যে খুঁইজ্যা পাইবেন কি না সন্দেহ। আধুনিক বাংলা ভাষাটা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পণ্ডিতেরা সংস্কৃত অভিধান দেইখা দেইখ্যা বানাইছে। আসল বাংলা ভাষা এইরকম আছিল না। আরবি ফারসি ভাষার শব্দ বাংলা ভাষার লগে মিশ্যা ভাষার একটা স্ট্রাকচার খাড়া অইছিল। পলাশির যুদ্ধের সময়ের কবি ভারতচন্দ্রের রচনায় তার অনেক নমুনা পাওয়া যাইব। ব্রিটিশ শাসন চালু অইবার পরে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পন্ডিতেরা আরবি ফারসি শব্দ ঝাঁটাইয়া বিদায় কইর‍্যা হেই জায়গায় সংস্কৃত শব্দ ভইরা থুইছে। বাংলা ভাষার চেহারা কেমন আছিল, পুরানা দলিলপত্র খুঁইজ্যা দেখলে কিছু প্রমাণ পাইবেন।

আমি বললাম, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পণ্ডিতেরা যে গদ্যরীতিটা চালু করেছিলেন, সেটা তো স্থায়ী হতে পারেনি। বিদ্যাসাগর, বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এসে বাংলা গদ্যের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন এবং রূপান্তর ঘটে গেছে।

পরিবর্তন ত অইছে। কিন্তু কীভাবে অইছে এইটা দেখন দরকার।

আমি জানতে চাইলাম, কীভাবে পরিবর্তনটা হয়েছে। স্যার বললেন, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পণ্ডিতেরা ভাষার স্ট্রাকচারটা খাড়া করেছিলেন, তার লগে ভাগীরথী পাড়ের ভাষার মিশ্রণে আধুনিক বাংলা ভাষাটা জন্মাইছে। আধুনিক বাংলা বঙ্গসন্তানের ঠিক মুখের ভাষা না, লেখাপড়া শিইখ্যা লায়েক অইলে তখনই ওই ভাষাটা তার মুখে আসে।

স্যার অনেকক্ষণ ধরে কথাবার্তা বলছিলেন। নিচে গাড়ির হর্ন শোনা গেল। তিনি তড়িঘড়ি উঠে দাঁড়ালেন। আমাগো মেহমানরা বুঝি অইলেন।

আমি বললাম, স্যার আমি এখন যাই।

স্যার বললেন, যাইবেন কই বয়েন, আপনেও একলগে চাইরটা খাইয়া যাইবেন।

আমি গায়ের ময়লা কাপড়াচোপড় দেখিয়ে বললাম, এই জামাকাপড়ে ভারতীয় হাইকমিশনারের সামনে যাওয়া ঠিক হবে না।

স্যার বললেন, মৌলবি আহমদ ছফা, আপনের মুখে এই প্রথম শুনলাম, আপনেও জামাকাপড়ের কথা চিন্তা করেন।

আমি চলে এলাম, স্যার আর পীড়াপীড়ি করলেন না।

কিছুদিন পরে স্যারের বাড়িতে গেলাম। স্যার একা ছিলেন। তাকে খুব খুশি-খুশি মনে হচ্ছিলো। কয়েকদিন থেকে একটা ব্যাপার নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে জবর বিতর্ক চলছিলো। বিষয়টি ছিল সেক্যুলারিজম। সেক্যুলারিজমের বাংলা প্রতিশব্দ কেউ-কেউ ইহজাগতিকতা বলে দাঁড় করাতে চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এই প্রতিশব্দের মধ্যে সেকুলারিজমের আসল স্বরূপ প্রকাশ পায়নি বলেই আমার ধারণা। তাই স্যারকে জিগ্‌গেস করলাম। সেকুলারিজম কী? স্যার বললেন, ইউরোপীয় রেনেসাঁর আগে খ্ৰীস্টানজগৎ মনে করত মরণের পরে যে অনন্ত জীবন অপেক্ষা কইর‍্যা আছে হেইড অইল আসল জীবন। দুনিয়ার জীবন তার অ্যাপেনডেজ মাত্র। খ্ৰীষ্টানগো শিল্প সাহিত্য সবখানেই পরকালের মহিমাকীর্তন করা অইত। যীশুখ্ৰীষ্ট ত এই নশ্বর দুনিয়াকে ভেল অভ টিয়ার্স কইয়া গেছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গিটা একদিনে একমাসে বা এক বছরে পাল্টায় নাই, অনেকদিন লাগছে। রেনেসাঁর সময়ে যখন ধীরে ধীরে জীবনের একটা ডেফিনেশন তৈয়ার অইতেছিল, তখন পুরা দৃষ্টিভঙ্গিটাই পাল্টাইয়া গেল। রেনেসাঁর আগে পরকালটাই আছিল সব। রেনেসাঁর পরে এই দুনিয়াটাই সব, পরকাল কিছুই না।

আমি বললাম, সব ধর্মেই তো অনন্ত জীবনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ইসলাম ধর্মেও পরকালের ভূমিকাকে বড় করে দেখানো হয়েছে।

স্যার বললেন, ইসলাম ধর্মের সঙ্গে অন্যান্য ধর্মের একটা বড় পার্থক্য এইখানে যে ইসলাম ধর্মেও পরকালের গুরুত্ব স্বীকার করা অইছে, কিন্তু ইহকালের গুরুত্বও অস্বীকার করা অয় নাই। ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখেরাতের কথা ইসলামে যেভাবে বলা আইছে, অন্য কোনো ধর্মে সেরকম নাই। তিনি বললেন, ইন্ডিয়ার কথাই ধরেন না কেন, এইখানে যত কাব্য লেখা অইছে, যত স্থাপত্য এবং ভাস্কৰ্যকীর্তি তৈয়ার অইছে, তার লক্ষ্য আছিল দেবতার সন্তোষ সাধন। মানুষের ভোগ, উপভোগ, আনন্দের কথা প্রসঙ্গক্রমে বলা অইলেও মূল গতিমুখ আছিল দেবতাদের সন্তুষ্ট করা। এই জিনিসটা বাংলা সাহিত্যেও দেখতে পাইবেন। ভারতচন্দ্র এইটিনথ সেঞ্চরিতে অন্নদামঙ্গল কাব্য দেবীর আদেশে, দেবীর পূজা প্রচলন করার উদ্দেশ্যে লিখতে বইছেন। মুসলমানেরা এই দেশে আইস্যা মসজিদ এবং অন্যান্য ধৰ্মস্থান সুন্দর কইর‍্যা বানাইছে, এই কথা যেমন সত্য, তেমন বাস করবার ঘরটারেও সুন্দর কইর‍্যা বানাইতে ভুল করেন নাই। এই জিনিস আপনে এ্যানসিয়েন্ট ইন্ডিয়াতে পাইবেন না। সেকুলারাইজেশন ইফেক্ট অব ইসলাম অন ইন্ডিয়া ওয়াজ রিয়্যালি ইনারমাস। এই কথা এখন অনেকে মাইন্যা নিবার চান না।

আমি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ওপর নাতিক্ষুদ্র একটি পুস্তিকা লিখেছিলাম। ওতে কিছু নতুন কথা সাহস করে বলেছিলাম। লেখাটির বক্তব্য নিয়ে ঢাকা এবং কলকাতার পণ্ডিতদের মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকে আমার সঙ্গে একমত হয়েছিলেন। অপরদিকে আমার মতের বিরোধিতা যারা করছিলেন, তাদের সংখ্যাও অল্প ছিল না। আমার ইচ্ছে ছিল রাজ্জাক স্যার আমার লেখাটি সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করেন। একসময়ে গিয়ে জেনে নেবো। নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। স্যারও থাকেন অনেক দূরে। কখন বাসায় থাকেন তারও ঠিক নেই। নানা মানুষ তাকে ধরে নানা জায়গায় নিয়ে যান। যাহোক, এক সন্ধ্যায় স্যারের বাড়িতে গেলাম। তিনি সিঙ্গাপুর থেকে কয়েকদিন হল চিকিৎসা সেরে এসেছেন। আমাকে দেখামাত্রই স্যার টেবিল থেকে বঙ্কিমের ওপর আমার লেখা বইটি হাতে তুলে নিয়ে বললেন, এই যে আপনের লেখা।

আমি একটুখানি বিস্মিত হয়ে বললাম, স্যার, আমি তো আপনাকে বইটা দিতেই এসেছি, আপনি কীভাবে পেলেন।

স্যার বললেন, আপনে দেওনের আগে পাইছি।

আমি জানতে চাইলাম, স্যার লেখাটি পড়েছেন।

আমি অপেক্ষা করছিলাম। তার মতামত জানার জন্য। স্যার এভাবে কথা শুরু করলেন, একটা কবিতা আছে না—‘আমি থাকি ছোট ঘরে বড় মন লয়ে, নিজের দুঃখের অন্ন খাই সুখী হয়ে।‘

বঙ্কিমের ব্যাপারে জিনিসটা অইব একেবারে উল্টা অর্থাৎ আমি থাকি বড় ঘরে ছোট মন লয়ে। হের উপরে আপনের সময় নষ্ট করার প্রয়োজন আছিল না। আপনের ত অঢেল ক্ষমতা, অপাত্রে নষ্ট করেন ক্যান? ইচ্ছা করলে অন্য কাম করবার পারেন।

একজন লেখক হিসেবে বঙ্কিমের চাপিয়ে দেয়া ধারণার প্রতিবাদ করার প্রয়োজনীয়তা আমি অনুভব করেছি, একথা স্যারকে বারবার করে বুঝিয়ে বলেও সন্তুষ্ট করতে পারলাম না।

কয়েক বছর থেকে একটা জিনিস। আমি লক্ষ করে আসছি। আমার কোনো লেখা যদি স্যারের মনঃপূত না হয়, স্যার সেই রচনা সম্পর্কে কোনো মন্তব্যই করেন না। শেলফ থেকে টলস্টয়ের ওয়ার অ্যান্ড পীস নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করেন। এই উপন্যাসে যুদ্ধের দৃশ্য কত নিপুণভাবে বর্ণিত হয়েছে, মানব-চরিত্রের গভীরে ড়ুব দিয়ে টলস্টয় কত বিশদভাবে ছোটো বড় চরিত্র বিকশিত করে তুলেছেন, নিসর্গদৃশ্য, নরনারীর প্রেম। এসব টলস্টয় যতো মুন্সিয়ানা সহকারে এঁকেছেন, জগতের কোনো লেখকের সঙ্গে তার তুলনা চলে না। অনেকবার কথাবার্তার মাঝখানে উঠে গিয়ে ওয়ার অ্যান্ড পীস উপন্যাসটি টেনে নানাদিক সম্পর্কে কথাবার্তা বলেছেন। বছরখানেক আগে একবার বলেছিলেন, টলষ্টয়াকে যদি সামন্তসমাজের ক্রিটিক হিসেবে ধরা হয়, তা হলে সালঝেনিতসিনকে বলতে হবে কমিউনিস্ট সমাজের ক্রিটিক। বঙ্কিমের ওপর কথা বলতে গিয়ে আজও স্যার টলষ্টয়ের ওয়ার অ্যান্ড পীসের ওপর এন্তার কথাবার্তা বললেন।

সেদিন ঘরে ফেরার সময় আমার মনে আচমকা একটা নতুন চিন্তা এলা। স্যার দীর্ঘদিন ধরে আমাকে টলষ্টয়ের ওয়ার অ্যান্ড পীস উপন্যাস সম্পর্কে এত আগ্রহী করার চেষ্টা করছেন কেনো? আমি নিজেকেই প্রশ্ন করলাম তার পেছনে স্যারের কি কোনো উদ্দেশ্য আছে? তখনই মনের ভেতর থেকে জবাব পেলাম। স্যার বোধ করি চান যে আমি ওয়ার অ্যান্ড পীসের মতো কোনো বড় কাজ করার চেষ্টা করি না কেনো? এইরকম একটি বড় উপন্যাস রচনা করার দাম আমার আছে কি না জানি না। আমার ধারণা সঠিক কি না পরখ করার জন্য একদিন স্যারের কাছেই সরাসরি প্রশ্ন করে বসলাম, স্যার, আপনি কি চান ওয়ার অ্যান্ড পীসের মতো একটি বড় উপন্যাস লেখার কাজে আমিও হাত দিই? স্যার সোজাসুজি আমার দিকে ভালো করে তাকালেন। হ, এতদিনে বুঝবার পারছেন?

রাজ্জাক স্যার আমার সঙ্গে কখনো আমার রচনার ভালোমন্দ কোনোকিছু আলোচনা করেননি। অন্যের মুখে শুনেছি, আমার লেখা তিনি পছন্দ করেন। তারিফ শুনতে কার না ইচ্ছে হয়! আমি একাধিকবার জানতে চেয়েছি, স্যার আমার লেখা আপনার কেমন লাগে, স্যার জবাব দিয়েছেন, না বাবা, আপনেগো লেখার ভালোমন্দ এখনও কইবার পারুম না। লেখার ক্ষমতা আছে লেইখ্যা যান। নিজের খুশিতে লেখবেন। অন্য মাইনষে কী কাইব হেইদিকে তাকাইয়া কিছু লেখবেন না।

স্যারের ওধরনের জবাব শোনার পর তার মতামত জানার সাহসী হয়নি। আমি কিন্তু স্যারকে হুমায়ূন আহমেদের প্রথম দিককার রচনার তারিফ করতে শুনেছি। একাধিকবার তিনি আমার কাছে বলেছেন, হুমায়ূনের লেখার হাতটি ভারি মিষ্টি। পরবর্তীতে হুমায়ূন-প্রসঙ্গ উথাপন করলেও উচ্চবাচ্য কিছু করতেন না।

জার্মান কবি গ্যোতের অমর কাব্য ফাউস্টের অনুবাদে আমি মন দিয়েছিলাম সেই সময়ে। তার একটা অংশ মাসিক সমকালে প্রকাশিত হয়েছিল। সেই অংশটুকু স্যারকে দেখিয়েছিলাম। স্যার একেবাবে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিলেন। আমার অনুবাদটির কথা কত মানুষকে যে বলেছিলেন, তার হিসেব নেই। যে ধরনের কাজে অমানুষিক মানসিক শ্রমের প্রয়োজন হয়, সে ধরনের কাজ করার প্রেরণা আমাদের সমাজ থেকে সংগ্রহ করা একরকম অসম্ভব। এখানে একজন বড় কাজ করলে উৎসাহ দেয়ার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না। আমাদের সমাজে গুণগ্ৰাহিতার পরিমাণ নিতান্তই সঙ্কুচিত। সুরুচিসম্পন্ন সংস্কৃতিবান অধিক মানুষ আমাদের সমাজে সত্যি সত্যি বিরল। অবশ্য সাম্প্রতিককালে অবস্থাটা কিছু-কিছু পাল্টাতে আরম্ভ করেছে। রাজ্জাক স্যার যদি আমাকে অনুবাদকর্মটা শেষ করার জন্য বারবার তাগাদা না দিতেন, হয়তো আমি এরকম একটি শ্রমসাধ্য কর্মে দীর্ঘকাল চেষ্টা প্ৰযত্ন এবং শ্রম ব্যয় করতে পারতাম না। একা রাজ্জাক স্যার অনুপ্রাণিত করেছিলেন, একথা বলাও সঠিক হবে না। আরও অনেকেই উৎসাহিত করেছিলেন। রাজ্জাক স্যারের সঙ্গে অন্য কারও তুলনা চলতে পারে না। কাজটি যখন শেষ করে আসছিলাম, সে সময়ে আমার হাতে বিশেষ টাকাপয়সা ছিলো না। তিনি সময়ে অসমইয়ে টাকাপয়সা দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছেন। তিনি আমার রচনাটির যেভাবে প্রশংসা করছিলেন, চাইতেন অন্যেরাও সেভাবে অনুবাদটিকে গ্রহণ করুন। সাহিত্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ তার বাড়িতে হামেশা যাওয়া-আসা করতেন। আমি উপস্থিত থাকলে আমাকে ফাউষ্টের অনুবাদ পাঠ করে শোনাতে নির্দেশ দিতেন। এই ভদ্ৰ লোকদের কেউ-কেউ মেপে মেপে প্রশংসাও করতেন। বলতেন বেশ হচ্ছে, শুনতে একটুও খারাপ শোনাচ্ছে না ইত্যাদি ইত্যাদি। দুয়েকবার এভাবে রচনা পাঠ করার পর আমার বুঝতে বাকি রইলো না। এই ভদ্রলোকেরা আমার রচনার প্রশংসা করেন, একারণে নয় যে আমার রচনাটি তাদের কাছে সত্যি সত্যি ভালো লেগেছে, স্যারকে খুশি করার জন্যই তারা প্রশংসার কথাগুলো বলতেন। তার পর থেকে স্যার কাউকে রচনা থেকে পড়ে শোনাতে বললে আমি বিরক্ত হতাম, মনেমনে চটে যেতাম। নানারকম অছিলা করে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করতাম।

একদিন সন্ধেবেলা স্যার আমাকে বললেন, আপনে আমার ওইখানে কাইল বেয়ানবেলা একবার আইবেন। নাস্তা আমার এইখানেই খাইবেন।

হাজির হয়েছেন। সৈয়দ আলি আহসান, মোস্তাফা নূরউল ইসলাম, ড. জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, সরদার ফজলুল করিম—আরও কে কে ছিলেন নাম মনে পড়ছে না। স্যার আমাকে অর্থনীতিবিদ ড. মুশাররফ হোসেনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে জানালেন, মৌলবি আহমদ ছফা ফাউস্ট অনুবাদ করছে এবং অনুবাদ খুব ভালো হচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি। ড. মুশাররফ বড় বড় চোখ পাকিয়ে এমনভাবে ই—ন্টা-রে—ষ্টি—ং শব্দটা উচ্চারণ করলেন শুনে, আমার পিত্তি জ্বলে গেলো। এই ধরনের বিলেত আমেরিকা-ফেরত ভদ্রলোকেরা নাসিক্যধ্বনিতে এমনভাবে বাংলা উচ্চারণ করেন, শুনে আপনার মনে হবে তিনি বাংলা বলতে একেবারে অভ্যস্ত নন, যেহেতু ইংরেজি বললে আপনি বুঝবেন না, তাই দয়া করে আপনার সঙ্গে মাতৃজবানে কথা বলছেন। আমি মনেমনে ঠিক করে নিলাম, এই মুহুর্তে একটা ফয়সালা করে নেয়া উচিত, টেবিলে স্তুপীকৃত খাদ্যবস্তু গলাধঃকরণ হওয়ার পরে স্যার অবশ্যই আমাকে অনুবাদ পাঠ করে শোনাবার নির্দেশ দেবেন। যে ভঙ্গিতে ডক্টর সাহেব ইন্টারেস্ট্রিং শব্দটা উচ্চারণ করলেন, সেরকম প্রশংসাবাক্য যদি আমাকে হাজেরান মজলিশের কাছ থেকেও শুনতে হয়, সেসব গুরুপাচ্য জিনিস আমার পক্ষে হজম করা সহজসাধ্য হবে না। তাই ভাবলাম ভোজনপর্ব সমাধা হওয়ার পূর্বে এমন-কিছু করে ফেলা উচিত যাতে করে রচনাপাঠ আপনা থেকেই স্থগিত হয়ে যায়। আমি ড. মুশাররফকে জিগ্‌গেস করলাম, আপনি আমার দিকে একটু তাকান। তিনি আমার দিকে তাকালে আমি প্রশ্ন করলাম, আপনি জীবনে কবি গ্যোতে কিংবা তার কাব্য ফাউস্টের নাম শুনেছেন?

ড. মুশাররফ ঘাড় চুলকে আমতা-আমতা করে বললেন, হাঁ শুনে থাকবো।

আমি বললাম, আর কিছু জানেন?

তিনি বললেন, মানে মানে কিছু-কিছু তো—

আমি তার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললাম, আপনি ইন্টারেষ্টিং শব্দটা যেভাবে প্যাট্রোনাইজিং টোনে উচ্চারণ করলেন আমি নিশ্চিত যে এব্যাপারে আপনি কিছুই জানেন না।

আমাকে সেদিন আর রচনা পাঠ করতে হয়নি, সেকথা বলাই বাহুল্য। এখনও ড. মুশাররফের সঙ্গে দেখা হলে ভালোমন্দ জিগ্‌গেস করেন। আমার ধারণা সেদিনের সে ব্যাপারটি তার পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এখানে প্রতিষ্ঠাসম্পন্ন কাউকে সালাম দিলে, সালামটা তার প্রাপ্য বলে ধরে নেন এবং যিনি সালাম দেন তাকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিতান্তই ছোটোলোক বলে ধরে নেয়া হয়।

অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর ফাউস্ট গ্রন্থটির অনুবাদ যখন শেষ করলাম, আমি সত্যি সত্যি মুশকিলে পড়ে গেলাম। যতোকাল কাজটা শেষ হয়নি। মনে-মনে ধারণা পোষণ করে আসছিলাম মহান একটি বিদেশী কাব্য আমি বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের কাছে নিয়ে আসছি। অনেক জ্ঞানীগুণী মানুষ আমার অনুবাদের তারিফ করেছেন। স্বভাবতই আমার মনে একটা গৰ্ববোধ জন্ম নিয়েছিল। রচনাটা যখন শেষ করলাম, দেখা গেল কোনো প্রকাশকই রচনাটিকে ছেপে বের করতে রাজি নন। যে-সকল প্রকাশক আমার যে-কোনো গদ্যরচনা এক সংস্করণের রয়্যালটির টাকা অগ্রিম শোধ করে প্রকাশ করতে কুষ্ঠিত হন না, তারাও বললেন, এই বই বাজারে বিক্রি হবে তার কোনো সম্ভাবনা নেই। সুতরাং তারা ছাপতে পারবেন না। এই অনুবাদকর্মটা সম্পন্ন করতে আমার বারো বছর লেগেছে। পাণ্ডুলিপির বোঝা হাতে করে প্রকাশকের ঘর থেকে ফিরে আসার সময়, আমার মনে হত বারো বছরের বিফল শ্ৰম আমার কাঁধে পৰ্বতের মতো ভারী হয়ে চেপে বসেছে।

যে-সকল বই প্রকাশকেরা সচরাচর ছাপেন না, সে-সকল মানসম্পন্ন রচনা বাংলা একাডেমী প্রকাশ করে থাকে। আমি বাংলা একাডেমীর শরণাপন্ন হলাম। একাডেমীর তৎকালীন আমলা মহাপরিচালক আমাকে যেভাবে পত্রপাঠ বিদায় করেছিলেন, সেই ঘটনাটি আমার মনে বিষাক্ত ক্ষতের মতো চিরদিন জেগে থাকবে। অথচ বাংলা একাডেমী আরেক ভদ্রলোককে, শেকসপীয়রের একটি নাটক অনুবাদ করার জন্য সোয়া লক্ষ টাকা অগ্রিম প্রদান করেছিল।

স্যারের বাড়িতে যেতে আমি বিব্রত বোধ করতাম। তিনি প্রকাশক পাওয়া গেলো কি না সে সংবাদ জানতে চাইতেন। আমি জবাব দিতে পারতাম না। আমার হাতে তখন টাকা পয়সাও ছিল না। বেঁচে থাকা ভীষণ কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছিলো। আমার করুণ মলিন মুখ দেখে স্যার পাছে আমাকে করুণা করেন, সেই ভয়ে স্যারের বাড়িতে যাওয়া অনেক কমিয়ে দিয়েছিলাম। স্যার আমার মনোবেদনার কথা জানতেন। ফাউস্ট সম্পর্কে আর কোনো কিছু জিগ্‌গেস করতেন না। আমিও আর সে প্রসঙ্গ উত্থাপন করতাম না।

একদিন স্যার আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি গেলে তিনি বললেন, কাইল আমি আলি আহসানের কাছে গেছিলাম। আপনের ফাউষ্টের ব্যাপারে কথাবার্তা কইছি। আপনেও যদি সময় পান একবার যাইয়েন। আলি আহসান আমারে কথা দিছেন, হে জাৰ্মান অ্যাম্বাস্যাডারের লগে কথাবার্তা কইয়া দেখব।

স্যারের কথামতো আমি একবার সৈয়দ আলি আহসান সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। তখন তিনি জিয়াউর রহমান সাহেবের উপদেষ্টা। আমি কোনোদিনই সৈয়দ সাহেবের প্রতিভাজন ছিলাম না। তবু আমি অবাক হলাম, এ কারণে যে তিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহের সঙ্গে গ্রহণ করলেন। আর বললেন, রাজ্জার স্যার বলেছেন তোমার ফাউস্টের অনুবাদটা খুব ভালো হয়েছে। আমি জার্মান অ্যাম্বাস্যাডারের সঙ্গে একটুখানি আলাপ করেছি। পরে আলাপ করে কী হল স্যারকে জানাবো।

দিন পনেরো পরে স্যার আমাকে আবার ডেকে পাঠালেন। আমি যখন স্যারের বাড়িতে গেলাম, দেখি স্যার বাইরে যাওয়ার জন্য তৈয়ার হচ্ছেন। আমাকে দেখে বললেন মৌলবি আহমদ ছফা। আমি এক জায়গায় যাইবার লাইছি, বেশি সময় অইব না। জার্মান অ্যাম্বাস্যাডারের লগে সৈয়দ আলি আহসান সাহেবের কথা আইছে। জার্মান অ্যাম্বাস্যাডার কইছেন, আপনের বই ছাপানোর সব খরচ অরা বিয়ার করব। আমি আলি আহসানরে একটা ভূমিকা লেইখ্যা দিবার কথা কইছি।

স্যারের কথা শুনে আমি ভীষণ উৎফুল্ল হয়ে উঠেছিলাম, কিন্তু যখন শুনলাম তিনি সৈয়দ আলি আহসানকে ভূমিকা লিখতে বলেছেন আমার মনটা বিশ্ৰী রকম খারাপ হয়ে গেলো। স্যারের ওপর আমার ভীষণ রাগ হল। আমি বারো বছর অমানুষিক পরিশ্রম করে অনুবাদকর্মটি সম্পন্ন করেছি। স্যার আমার মতামত না জেনে সৈয়দ আলি আহসান সাহেবকে ভূমিকা লেখার প্রস্তাব দিয়েছেন। এটা আমি কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছিলাম না। সেদিন স্যারকে কিছু না বলে চলে এসেছি। ঘরে এসে ব্যাপারটা গভীরভাবে চিন্তা করে দেখেছি। স্যার আমার ভালো চান, তাই আপনা থেকে উপযাচক হয়ে গিয়ে সৈয়দ আলি আহসান সাহেবের কাছে প্রস্তাব করেছেন, তাঁকে রাজি করিয়েছেন। এখন আমি যদি রাজি না হই স্যার মনেমনে চোট পেয়ে যাবেন। সে রাতে ঘুমোতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। যে অনুবাদটি করতে আমি বারো বছর ব্যয় করেছি, সে বইটির জন্য অন্য কেউ আড়াই ঘণ্টায় আড়াই পৃষ্ঠার ভূমিকা লিখে দেবেন, সেটি কবুল করার চাইতে আমার ডানহাত কেটে ফেলা অনেক সহজ ছিলো। স্যারকে পরদিন গিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলাম, আমি আরও কিছুদিন অপেক্ষা করবো, যদি বইটি অন্য কোনোভাবে প্রকাশ করা যায়। আমার আপত্তি কোথায় স্যার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছিলেন। তিনি হুঁকোর নলটা মুখে দিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তারপর ছোটো একটা নিশ্বাস ফেলে বললেন, আপনের উপকার করা অসম্ভব। আমাদের শ্রদ্ধাভাজন বয়োজ্যেষ্ঠরা যেভাবে আমাদের উপকার করতে চান আমরা পরবর্তী প্রজন্মের তরুণরা যেভাবে উপকৃত হতে চাই, তার মধ্যে বিস্তর ফারাক, সেদিন খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিলাম।

পরবর্তীকালে আমার পক্ষে ফাউস্ট প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছিলো। এমনকি কোলকাতাতেও একটি এডিশন প্রকাশিত হয়েছিলো। জার্মান অ্যাম্বেসির অর্থানুকূল্যে ঢাকার এডিশনটি প্রকাশিত হয়েছিল। কলকাতার এডিশনটির ব্যয়ভার বহন করেছিলেন কোলকাতার জার্মান কনসাল জেনারেল।

স্যারের বিষয়ে লিখতে গিয়ে আমার ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করেছি। তথাপি ফাউষ্টের বিষয়টি আমি বাদ দিতে পারলাম না। এই নাতিক্ষুদ্র রচনাটিতে আমার পক্ষে যতোদূর সম্ভব প্রফেসর রাজ্জাকের মতামতসমূহ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। উনি যেভাবে তার কথা বলেছেন, আমি যেভাবে সেগুলো প্রকাশ করেছি। এমন দাবি আমি করতে পারবো না—একটা ফারাক অবশ্যই থেকে গিয়েছে। সে ব্যাপারে অবশ্যই আমি সজাগ। স্মৃতি থেকে তুলে আনার সময় তার মতামত এবং ব্যক্তি হিসেবে তাকে যথাযথ উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। আমার যেটুকু সাধ্য আমি করেছি। এপর্যন্ত আমি রাজ্জাক স্যারের কথা বলেছি। তাঁর সম্পর্কে আমার আরও কিছু কথা আছে, সেগুলো পরবর্তীতে বলার চেষ্টা করছি।