দুই

প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে পরিচিত হওয়া আমার জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহের একটি। দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতা নির্মাণে, নিষ্কাম জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে, প্রচলিত জনমত উপেক্ষা করে নিজের বিশ্বাসের প্রতি স্থিত থাকার ব্যাপারে প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকের মতো আমাকে অন্য কোনো জীবিত বা মৃত মানুষ অতোটা প্রভাবিত করতে পারেনি। প্রফেসর রাজ্জাকের সান্নিধ্যে আসতে পারার কারণে আমার ভাবনার পরিমণ্ডল বিস্তৃততর হয়েছে, মানসজীবন ঋদ্ধ এবং সমৃদ্ধতিরো হয়েছে। আমি যদি বসওয়েলের মতো পরিপাটি স্বভাবের মানুষ হতাম, কিংবা একারমানের মতো শৃঙ্খলা নিষ্ঠ আনুগত্য আমার থাকত, বসওয়েল যেভাবে জনসনের একটি বিশ্বাসযোগ্য চরিত্র সকলের সামনে তুলে ধরতে পেরেছেন, অথবা একারমান যেরকম অখণ্ড বিশ্বস্ততা সহকারে দিন তারিখ প্রহর উল্লেখ করে মহাকবি গ্যোতের কথোপকথন লিপিবদ্ধ করে রেখে গেছেন, সে ধরনের একটা গ্রন্থ প্রফেসর রাজাকের ওপর রচনা করা হয়তো আমার পক্ষে অসম্ভব হত না। আমি গল্প কবিতা উপন্যাস এসকল জিনিস লিখে থাকি এবং লিখে আনন্দ পেয়ে থাকি। সৃষ্টিশীল মানুষেরা সাধারণত বিপজ্জনক ধরনের হয়ে থাকেন। বাইরে তারা যতোই নিরীহ এবং অপরের প্রতি মনোযোগী হয়ে থাকুন না কেনো ভেতরে তাদের স্বেচ্ছাচারী হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। যেখানে আত্মপ্রকাশের বিষয়টি অপর সকল কিছুকে ছাপিয়ে ওঠে, সেখানে ব্যক্তিকে অনিবাৰ্যভাবে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে হয়। সৃষ্টিধর্মের নিয়ম ছাড়া বাইরের কোনো নিয়ম সেখানে ক্রিয়াশীল হয়ে উঠতে পারে না।

উনিশশো বাহাত্তর সাল থেকে শুরু করে উনিশশো চুরাশি সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় এক যুগ সময়ের সবটাই কম করে হলেও অন্তত সপ্তাহে একবার প্রফেসর রাজ্জাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। নানা বিষয়ে তার বক্তব্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা মুগ্ধ হয়ে শুনেছি। ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্র ইত্যাকার বিষয়ের ওপর যেসকল কথা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তিনি বলে গেছেন, সেগুলো যদি দিন তারিখ উল্লেখ করে যথাযথভাবে টুকে রাখতে পারতাম, আমি আমার দেশের মানুষের সামনে জ্ঞানবিজ্ঞানের একটা রত্নভাণ্ডারের পরিচয় তুলে ধরতে পারতাম। এই রচনার পরবর্তী অংশে আমি সেসকল কথাই বলবো, যেগুলো অদ্যাবধি আমার পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি। আমার দ্বিধা এবং শঙ্কার পরিমাণও সামান্য নয়। প্রফেসর রাজ্জাক যে স্পিরিটে কথা বলেছেন আমার উপস্থাপনায় সে জিনিসটি অবিকৃতভাবে রক্ষিত হয়েছে এমন দাবি করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। শোনা কথা স্মৃতি থেকে উদ্ধার করে উপস্থাপন করার বেলায় মূলের অনেক কিছুই হারিয়ে যেতে পারে। আমার ক্ষেত্রেও সেটি যে ঘটেনি এমন কথা আমি বলতে পারবো না।

বিগত অর্ধশতাব্দীরও অধিক সময় ধরে আমাদের দেশের কৃতবিদ্য ব্যক্তিদের একটা বিরাট অংশ প্রফেসর রাজাকের সংস্পর্শে এসেছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজসমূহ, আমলাতন্ত্র, রাজনীতি এবং আইন ইত্যাকার নানা পেশার মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছেন। তাদের একাংশ মারা গেছেন। তা সত্ত্বেও একটা বিরাট অংশ অদ্যাবধি জীবিত আছেন। তাদের মধ্যে এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন, যারা প্রফেসর রাজ্জাকের সংস্পর্শে এসেছেন। তার পাণ্ডিত্যের চুম্বকের মতো একটা আকর্ষণী শক্তি অবশ্যই আছে। বিদেশের অনেক বিদগ্ধ ব্যক্তিও নানা সময়ে প্রফেসর রাজ্জাকের ব্যক্তিত্বের সম্মোহনে তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। পরবর্তী জীবনে তাদের কেউ-কেউ বিশ্বব্যাপী খ্যাতি এবং পরিচিতির অধিকারী হয়েছেন। সে তুলনায় আমি নিতান্তই সামান্য মানুষ। প্রফেসর রাজ্জাকের একনিষ্ঠ ভক্ত অগ্রজপ্রতিম অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম তাঁর সঙ্গে আলাপচারিতার ভিত্তিতে যে অসাধারণ গ্রন্থটি রচনা করেছেন সেরকম যোগ্যতা, একাগ্রতা এবং বিষয়নিষ্ঠা আমি কোথায় পাবো? আমি এই রচনার পরবর্তী অংশে প্রফেসর রাজ্জাককে উপলক্ষ করে যেসকল কথা বলছি, তার মধ্যে প্রফেসর রাজ্জাক কতটুকু আছেন, আমি কতটুকু, ভেদরেখাটি আমার কাছেও স্পষ্ট নয়। মোটের ওপর এ রচনাটি দাড়াচ্ছে মহাকবি আলাওলের ভাষায়—“গুরু, মুহম্মদে করি ভক্তি, স্থানে স্থানে প্রকাশিব নিজ মনোউক্তি” অনেকটা এরকম।

আমি বন্ধুবান্ধবদের কাছে একজন জ্ঞানী শিক্ষকের নাম জানতে চেয়েছিলাম, র্যাকে আমার পিএইচডি থিসিসটির পরামর্শক হিসেবে বেছে নিতে পারি। সকলে আমাকে বললেন তুমি রাজ্জাক সাহেবের কাছে যাও। তার মতো পণ্ডিত আর একজনও নেই। সে সময়ে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে পলিটিক্যাল সায়েন্সে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলাম। সুতরাং বাংলা বিভাগের বাইরে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে মাত্র দুয়েকজনকে চিনতাম। পলিটিক্যাল সায়েন্সের ম্যাক মানে মোজাফফর আহমদ চৌধুরী সাহেবকে দূর থেকে দেখেছি। আবদুর রাজ্জাক নামের একজন শিক্ষক আছেন জানতে পারলাম, যখন আমার পিএইচডি থিসিসের একজন সুপারভাইজার বেছে নেয়ার কথা উঠল।

আমি স্থির করলাম একদিন রাজ্জাক সাহেবের বাড়িতে গিয়ে আমার থিসিসের সুপারভাইজার হওয়ার অনুরোধটা করবো। বন্ধুবান্ধবেরা আমাকে এ মৰ্মে হুশিয়ার করে দিল যে রাজ্জাক সাহেব ভীষণ নাকউচু স্বভাবের মানুষ। বাঘা বাঘা লোকেরাও তাঁর কাছে ঘেঁষতে ভীষণ ভয় করেন। সুতরাং কথাবার্তা সাবধানে বলবে। যদি তার অপছন্দ হয়, পত্রপাঠ দরোজা দেখিয়ে দেবেন। অনেক দ্বিধা, অনেক শঙ্কা এবং সঙ্কোচ নিয়ে একদিন বিকেলবেলা প্রফেসর রাজ্জাকের বাড়িতে গেলাম। তখন তিনি শহীদ মিনারের বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কোয়ার্টারের একটিতে নিচের তলায় থাকতেন। দরোজা আধভেজানো অবস্থায় ছিল। আমি খানিকক্ষণ ইতস্ততা করছিলাম। যদি দরোজা ঠেলে সোজা ঢুকে পড়ি কেমন দেখাবে? মনে তো শঙ্কা ছিলোই। কোনো আচরণ যদি বেয়াদবি ঠেকে? বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করার পরও কাউকে না পেয়ে আমি ভয়ে ভয়ে দরোজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলাম।

ঘরটির পরিসর বিশেষ বড় নয়। চারদিক বইপুস্তকে ঠাসা। ঘরটিতে একটিমাত্র খাট, না, খাট বলা ঠিক হবে না, চৌকি। সামনে একটি ছোটো টেবিল। চৌকিটির আবার একটি পায়া নেই। সেই জায়গায় বইয়ের ওপর বই রেখে ফাকটুকু ভরাট করা হয়েছে। চমৎকার ব্যবস্থা। পুরোনো বইপত্রের আলাদা একটা গান্ধ আছে। আমি সেই বইপত্রের জঞ্জালে হতবিহবল হয়ে দাড়িয়ে আছি। এই ঘরে যে কোনো মানুষ আছে প্রথমে খেয়ালই করিনি। হঠাৎ দেখলাম চৌকির ওপর একটা মানুষ ঘুমিয়ে আছে। একখানা পাতলা কথা সেই মানুষটার নাক অবধি টেনে দেয়া। চোখ দুটি বোজা। মাথার চুল কাঁচাপাকা। অনুমানে বুঝে নিলাম, ইনিই প্রফেসর রাজ্জাক। ঘরে দ্বিতীয় একজন মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে খাটেশোয়া মানুষটি কী করে বুঝে গেলেন। তিনি চোখ খুলে নাকমুখ থেকে কথাটি সারিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কেডা?

আমি চৌকির একেবারে কাছটিতে গিয়ে সালাম দিলাম এবং নাম বললাম।

তিনি ঘুম-জড়ানো স্বরেই জানতে চাইলেন, আইছেন ক্যান হেইডা কন।

আমাকে বলতেই হলো, বাংলা একাডেমী আমাকে পিএইচডি করার জন্য একটা বৃত্তি দিয়েছে। আমি তার কাছে এসেছি। একটা বিশেষ অনুরোধ নিয়ে, তিনি যেনো দয়া করে আমার গবেষণার পরামর্শক হতে সন্মত হন। আমার আর্জিটা যথাসম্ভব বিনয়নম জবানে প্রকাশ করলাম। কিন্তু প্রফেসর রাজ্জাকের মধ্যে তার সামান্যতম প্রতিক্রিয়াও লক্ষ করা গেলো না। তিনি পাশ ফিরে কথাটি নাকমুখ অবধি টেনে দিলেন। আমার এত বিনীত আবেদন এত নীরবে কোনো মানুষ প্রত্যাখ্যান করতে পারে, আমি চিন্তাও করতে পারিনি। তখন আমার দুটি কি তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে এবং মনেমনে অনেক সেয়ানা হয়ে উঠেছি। আমার আত্মাভিমানে একটু ঘা লাগলো। নিজেকেই জিগ্‌গেস করলাম, কেমন মানুষ এই প্রফেসর রাজ্জাক। আমি একটা অনুরোধ করলাম, আর শুনেই তিনি পাশ ফিরলেন। আমি তো অন্ততপক্ষে একজন লেখক। নিজের কাছে আমার দাম অল্প নয়। তিনি যেদিকে পাশ ফিরেছেন আমি ঘুরে চৌকির সেই পাশটিতে গিয়ে আবার বললাম, স্যার, আপনাকে আমার থিসিসের সুপারভাইজার হওয়ার জন্য অনুরোধ করতে এসেছি। আমার আর্জি দ্বিতীয়বার শুনে প্রফেসর রাজ্জাক আবার উত্তর দিকে পাশ ফিরলেন।

আমার ভীষণ রাগ ধরে গেলো। কেমনতরো মানুষ প্রফেসর রাজ্জাক! তার কাছে একটা আবেদন করলাম। তিনি ভালোমন্দ কোনো জবাব না দিয়ে নীরব প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে আমাকে বিদায় করতে চান। হতবাক হয়ে আমি কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলাম। এইভাবে অপমানিত হয়ে যদি আমি চলে আসি আমার নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে যাই। কিছু একটা করা প্রয়োজন, কিন্তু কী করা যায়! প্রফেসরের বইয়ের গুদামে যদি আগুন লাগিয়ে দেয়া যেতো, মনের ঝাল কিছুটা মিটতো। কিন্তু সেটিতো আর সম্ভব নয়। আমি দু’হাত দিয়ে তার শরীর থেকে কাঁথাটি টেনে নিয়ে দলা পাকাতে পাকাতে বললাম, আমার মতো একজন আগ্রহী যুবককে আপনি একটি কথাও না বলে তাড়িয়ে দিতে পারেন, এত বিদ্যা নিয়ে কী করবেন? বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো তিনি চৌকির ওপর উঠে বসলেন। পরনের সাদা আধময়লা লুঙ্গিটা টেনে গিঁট দিলেন। তারপর চশমাটা টেবিল থেকে তুলে নিয়ে কাচ মুছে নাকের আগায় চড়ালেন। খুব সম্ভব বাইফোকাল গ্লাস। আমি তাঁর দৃষ্টিশক্তির তীব্রতা অনুভব করলাম। কোনো মানুষের চোখের দৃষ্টি এত প্রখর হতে পারে আমার কোনো ধারণা ছিল না। তিনি আমার খদ্দরের পাজামা পাঞ্জাবি, পরনের স্পঞ্জ এবং ধুলোভর্তি মলিন চরণ সবকিছুর ওপর এক ঝলক দৃষ্টি বুলিয়ে নিলেন। তারপর আঙুল দিয়ে একটা আধাভাঙা কাঠের চেয়ার দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ওইহানে বয়েন।

আমি যখন বসলাম, তিনি ভেতরে গেলেন। একটু পরে মুখে পানি দিয়ে ফিরে এলেন। তারপর খদ্দরের চাদরটা টেনে নিয়ে গায়ের ওপর মেলে দিলেন। আমার মনে হল তার পরনের গেঞ্জির বড় বড় ফুটো দুটো আমার দৃষ্টি থেকে আড়াল করার জন্যই চাদরটার সাহায্য নিলেন। যুত করে চেয়ারে বসার পর আমাকে বললেন, কী কাইবার চান, অখন কন।

আমি বললাম, আমি বাংলা একাডেমী থেকে পিএইচডি করার একটা ফেলোশিপ পেয়েছি, আমার খুব শখ আপনার অধীনে আমি গবেষণার কাজটা করি।

তিনি বললেন, গবেষণা করবেন। হেইডা ত ভালা কথা। কিন্তু আমি ত আপনের থিসিসের সুপারভাইজার থাকবার পারুম না।

প্রফেসর রাজ্জাকের কণ্ঠস্বর শুনে মনে হলো, তিনি আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন বলে একটা সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে নিয়ে ফেলেছেন। আমি বললাম, কেনো স্যার?

অফিসিয়ালি থিসিস সুপারভাইজ করনের লাইগ্যা মিনিমাম রীডার অওন লাগে। আমি ত মোটে লেকচারার। সুতরাং আপনের শখ পূরণ অণ্ডনের কোনো সম্ভাবনা নাই।

তাঁর কথা শুনে আমি দমে গেলাম। তার পরেও বললাম, অন্য কারও অধীনে থিসিসটা রেজিষ্ট্রেশন নাহয় করলাম। তার পরামর্শ এবং নির্দেশনা নিয়েই আমি কাজটা করতে চাই। প্রফেসর রাজ্জাক বললেন, আপনের টপিক মানে বিষয়বস্তুটা কী?

আমি বললাম, দ্যা গ্রোথ অব মিডল ক্লাস ইন বেঙ্গল অ্যাজ ইট ইনফ্লয়েন্সড ইটস্ লিটারেচার, সোসাইটি অ্যান্ড ইকনমিকস ফ্রম এইটিনথ টু এইটিনথ ফিফটি এইট।

প্রফেসর রাজ্জাক বললেন, এক্কেরে ত সাগর সেঁচার কাম। কার বুদ্ধিতে এই গন্ধমাদন মাথায় লইছেন?

আমি বললাম, অন্য কারও পরামর্শে নয়, আমি নিজেই বিষয়টা বেছে নিয়েছি।

প্রফেসর রাজ্জাক কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। এরই মধ্যে কাজের ছেলেটা কল্কিতে তামাক দিয়ে গেলো। কয়েকটা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন, রেজিস্ট্রেশন ফর্ম রেডি করছেন?

আমাকে বলতে হল, আমাকে বৃত্তিটা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটা কার্যকর হবে এমএ-র রেজাল্টের পর। এখন পরীক্ষা চলছে।

তিনি বললেন, আগে পরীক্ষা দিয়া লন। যখন রেজাল্ট বাইর অইব তখন আয়েন।

আমি সালাম করে চলে আসছিলাম। তিনি বললেন, আরেকটু বইয়েন, এক পেয়ালা চা খাইয়া যান। তিনি দীপ্তি বলে কাউকে ডাকলেন। একটি গোলগাল ফর্সা কিশোরী বেরিয়ে এলে আমাকে জিগ্‌গেস করলেন, কী য্যান কইলেন আপনের নাম?

আমি বললাম, আহমদ ছফা।

তিনি বললেন, মৌলবি আহমদ ছফাকে এক পেয়ালা চা দে।

প্রফেসর রাজ্জাকের বাড়ি থেকে ফিরে আসার সময় তিনটে জিনিস আমার মনে দাগ কেটে বসে গিয়েছে। প্রথমত তার চোখের দৃষ্টি অসাধারণ রকম তীক্ষ্ণ। একেবারে মৰ্মে গিয়ে বেঁধে। দ্বিতীয়ত ঢাকাইয়া বুলি তিনি অবলীলায় ব্যবহার করেন, তার মুখে শুনলে এই ভাষাটি ভদ্রলোকের ভাষা মনে হয়। তৃতীয়ত আমাকে তিনি মৌলবি আহমদ ছফা বললেন কেনো? আদর করে বললেন, নাকি অবজ্ঞা করলেন? পরের বছরগুলোতে যতোবারই তাঁর কাছে গিয়েছি প্রতিবারই প্রথম সম্বোধনে জিগ্‌গেস করেছেন, মৌলবি আহমদ ছফা কী খবর?