সিপাহী বিদ্রোহ
কবি- সুকান্ত ভট্টাচার্য

 

হঠাৎ দেশে উঠল আওয়াজ – “ হো–হো, হো-হো, হো-হো”
চমকে সবাই তাকিয়ে দেখে – সিপাহী বিদ্রোহ!
আগুন হয়ে সারাটা দেশ ফেটে পড়ল রাগে,
ছেলে বুড়ো জেগে উঠল নব্বই সন আগে :
একশো বছর গোলামিতে সবাই তখন ক্ষিপ্ত,
বিদেশীদের রক্ত পেলেই তবেই হবে তৃপ্ত !
নানাসাহেব, তাঁতিয়াটোপি, ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্ণী-
সবার হাতে অস্ত্র, নাচে বনের পশু-পক্ষী।
কেবল ধনী, জমিদার, আর আগের রাজার ভক্ত
যোগ দিল, তা নয়কো, দিল গরীবেরাও রক্ত !
সবাই জীবন তচ্ছ করে, মুসলমান ও হিন্দু,
সবাই দিতে রাজি তাদের প্রতি রক্তবিন্দু ;
ইতিহাসের পাতায় তোমরা পড় কেবল মিথ্যে,
বিদেশীরা ভুল বোঝাতে চায় তোমাদের চিত্তে।
অত্যাচারী নয়কো তারা, অত্যাচারীর মুন্ড
চেয়েছিল ফেলতে ছিঁড়ে জ্বালিয়ে অগ্নিকুন্ড।
নানা জাতের নানান সেপাই গরীব এবং মূর্খ :
সবাই তারা বুঝেছিল অধীনতার দুঃখ ;
তাইতো তারা স্বাধীনতার প্রথম লড়াই লড়তে
এগিয়েছিল, এগিয়েছিল মরণ বরণ করতে !

আজকে যখন স্বাধীন হবার শেষ লড়াইয়ের ডঙ্কা
উঠছে বেজে, কোনোদিকেই নেইকো কোনো শঙ্কা ;
জব্বলপুরে সেপাইদেরও উঠছে বেজে বাদ্য
নতুন ক’রে বিদ্রোহ আজ, কেউ নয়কো বাধ্য,
তখন এঁদের স্মরণ করো, স্মরণ করো নিত্য-
এঁদের নামে, এঁদের পণে শানিয়ে তোলো চিত্ত।
নানাসাহেব, তাঁতিয়াটোপি, ঝাঁসীর রাণী লক্ষ্ণী,
এঁদের নামে, দৃপ্ত কিশোর, খুলব তোমার চোখ কি ?

 


আরও পড়ুন – মিঠেকড়া / সুকান্ত ভট্টাচার্য