টেরোড্যাকটিলের ডিম
– সত্যজিৎ রায়
বদনবাবু আপিসের পর আর কার্জন পার্কে আসেন না।
আগে ছিল ভাল। সুরেন বাঁড়ুজ্যের স্ট্যাচুর পাশটায় ঘণ্টাখানেক চুপচাপ বসে বিশ্রাম করে তারপর ট্রামের ভিড়টা একটু কমলে সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় শিবঠাকুর লেনে বাড়ি ফিরতেন।
এখন ট্রামের লাইন ভিতরে এসে পড়ায় পার্কে বসার আর সে আনন্দ নেই। অথচ এই ভিড়ে গলদঘর্ম অবস্থায় ঝুলতে ঝুলতে বাড়ি ফেরাই বা যায় কী করে?
আর শুধু তাই নয়। দিনের মধ্যে একটা ঘণ্টা অন্তত একটু চুপচাপ বসে থেকে কলকাতার যেটুকু খোলামেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আছে সেটুকু উপভোগ করা–এ না হলে বদনবাবুর যেন জীবনই বৃথা। রোনি হলেও কল্পনাপ্রবণ তিনি। এই কার্জন পার্কেই বসে মনে মনে তিনি কত গল্পই কেঁদেছেন। কিন্তু লেখা হয়ে ওঠেনি কোনওদিন। সময় কোথায়? লিখলে হয়তো নামটাম করতে পারতেন এমন বিশ্বাস তাঁর আছে।
অবিশ্যি গল্পগুলো যে সবই মাঠে মারা গেছে তা নয়।
তাঁর পঙ্গু ছেলে বিলটু এখন বড় হয়েছে। সাত বছর বয়স তার। সে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারে না। ফলে তার অনেকখানি সময় হয় মার কাছে না-হয় বাবার কাছে গল্প শুনে কাটে। জানা গল্প, ছাপা গল্প, ভূতের গল্প, হাসির গল্প, দেশবিদেশের রূপকথা, উপকথা, প্রায় সবই তার গত তিন বছরে শোনা হয়ে গেছে। কম করে হাজার গল্প। ইদানীং বদনবাবু তাকে রোজ রাত্রে শোয়ার আগে একটি করে নতুন গল্প বানিয়ে বলেছেন। এ গল্প তাঁর কার্জন পার্কে বসেই বানানো।
কিন্তু গত একমাসে এ নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে অনেকবার। যেকটি গল্প বলেছেন তাও যে তেমন জমেনি তা বিলটুর মুখ দেখেই বোঝা গেছে। তা হবে না-ই বা কেন? একে তো এমনিতেই আপিসে কাজের চাপ, তার উপরে বিশ্রামের জায়গাটির সঙ্গে চিন্তার সুযোগটিও যে লোপ পেয়েছে।
কার্জন পার্ক ছাড়ার পর ক’দিন লালদিঘির ধারটায় গিয়ে বসেছিলেন। ভাল লাগেনি। টেলিফোনের ওই অতিকায় রাক্ষুসে বাড়িটা আকাশের অনেকখানি খেয়ে ফেলে সব মাটি করে দিয়েছে।
তারপরে অবিশ্যি লালদিঘির মাঠেও চলে এসেছে ট্রামের রাস্তা এবং বদনবাবুও বিশ্রামের অন্য জায়গা খুঁজতে বাধ্য হয়েছেন।
আজ তিনি এসেছেন গঙ্গার ধারে।
আউটরাম ঘাটের দক্ষিণে, রেললাইনের ধার দিয়ে পোয়াটাক পথ গিয়ে এই বেঞ্চি। ওই দেখা যাচ্ছে তোপের কেল্লা। লোহার শিকের মাথায় বলটা এখনও রয়েছে। যেন কাঠির ডগায় আলুর দম।
বদনবাবুর ইস্কুলের কথা মনে পড়ে গেল। একটা বাজলেই গুডুম করে তোপের শব্দ, আর টিফিনের ছুটি, আর হেডমাস্টার হরিনাথবাবুর ট্যাঁকঘড়ি মেলানো।
জায়গাটা ঠিক নির্জন বলা চলে না। সামনেই নদীতে সার-সার নৌকো বাঁধা আর তার উপরে মাঝিমাল্লাদের কথাবার্তা। দূরে একটা ছাই রঙের জাপানি জাহাজ এসে নোঙর ফেলেছে। আরও দূরে, খিদিরপুরের দিকটায়, সন্ধ্যায় আকাশ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাস্তুল আর কপিকলের ঝাড়।
বাঃ, বেশ জায়গা।
বেঞ্চিটায় বসা যাক।
ওই যে শুকতারা, স্টিমারের ধোঁয়ার ভিতর দিয়ে আবছা আবছা দেখা যায়।
বদনবাবুর মনে হল যেন অনেকদিন তিনি এতখানি আকাশ একসঙ্গে দেখেননি। আহা, কী বিরাট, কী বিশাল! এমন না হলে কল্পনার পাখি ডানা মেলে উড়বে কী করে?
বদনবাবু ক্যাম্বিসের জুতোটা খুলে পা তুলে বাবু হয়ে বসলেন।
আজ তিনি, একটা কেন, অনেকগুলো গল্পের প্লট ফাঁদবেন এখানে বসে। এতদিনের অভাব মিটিয়ে নেবেন।
বিলটুর খুশি-ভরা মুখটা তিনি যেন চোখের সামনে দেখতে পেলেন।
নমস্কার!
এই রে! এখানেও ব্যাঘাত?
বদনবাবু ফিরে দেখলেন একটি লিকলিকে রোগা লোক, বছর পঞ্চাশেক বয়স, পরনে খয়েরি কোট-প্যান্ট, কাঁধে চটের থলি। সন্ধ্যার ফিকে আলোয় মুখ ভাল বোঝা যাচ্ছে না, তবে চোখের দৃষ্টি যেন অস্বাভাবিক তীক্ষ্ণ।
আর ওটা কী? স্টেথোস্কোপ নাকি?
ভদ্রলোকের বুকের কাছে একটি ঝোলায়মান যন্ত্র থেকে দুটি রবারের নল বেরিয়ে তাঁর কানের মধ্যে ঢুকেছে।
আগন্তুক মৃদু হেসে বললেন, ‘ডিসটার্ব করছি না তো? কিছু মনে করবেন না। আপনাকে এখানে আগে কখনও দেখিনি, তাই…’
বদনবাবু বেজায় বিরক্ত হলেন। বেশ তো নিরিবিলি ছিলাম রে বাপু! কেন মিছে গায়ে পড়ে আলাপ রা? সব মাটি হয়ে গেল। বেচারি বিলটুকে কী কৈফিয়ত দেবেন তিনি?
মুখে বললেন, ‘আগে আসিনি, তাই দেখেননি আর কি। এতবড় শহরে দেখার চেয়ে না-দেখার লোকের সংখ্যাই বেশি নয় কি?’
আগন্তুক বদনবাবুর শ্লেষ অগ্রাহ্য করে বললেন, আমি আসছি আজ চার বছর ধরে, সমানে।
‘ও।‘
‘ঠিক এইখানে। এই একই জায়গায়। এই বেঞ্চিতে। এটাই আমার এক্সপেরিমেন্টের জায়গা কিনা!’
এক্সপেরিমেন্ট? গঙ্গার ধারে খোলা মাঠে আবার এক্সপেরিমেন্ট কী? লোকটা ছিটগ্রস্ত নাকি?
কিংবা যদি অন্য কিছু হয়? গুণ্ডা-টুণ্ডা জাতীয় কিছু? কলকাতা শহর তো, কিছুই বলা যায় না।
সর্বনাশ! বদনবাবু আজ মাইনে পেয়েছেন। ট্যাঁকে রুমালে বাঁধা দু’খানা কড়কড়ে একশো টাকার নোট। তা ছাড়া পকেটে মানিব্যাগে নোট-খুচরো মিলিয়ে পঞ্চান্ন টাকা বত্রিশ নয়া পয়সা।
বদনবাবু উঠে পড়লেন। সাবধানের মার নেই।
‘সে কী মশাই? চললেন? রাগ করলেন নাকি?
‘না। না।’
‘তবে? এই তো বসলেন। এর মধ্যেই উঠছেন?’
সত্যিই তো! তিনি এমন ছেলেমানুষি করছেন কেন? ভয় কীসের? ত্রিশ গজ দূরে সামনের নৌকোগুলোতে অন্তত শখানেক লোক।
বদনবাবু তাও বললেন, ‘যাই, দেরি হল।’
‘দেরি? সবে তো সাড়ে-পাঁচটা।’
‘অনেকখানি পথ যেতে হবে।’
‘কতখানি?’
‘সেই বাগবাজারে।’
‘আরে রাম রাম। তাও যদি বলতেন শ্রীরামপুর কি চুচড়োকি নিদেনপক্ষে দক্ষিণেশ্বর।’
‘তাও কম কী? ট্রামে করে পাক্কা চল্লিশ মিনিট। তার উপর দশ মিনিটের হাঁটা তো আছেই।’
‘তা বটে!’
আগন্তুক হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলেন। তারপর বিড়বিড় করে বললেন, ‘চল্লিশ প্লাস দশ–পঞ্চাশ।…আমি আবার মিনিট-ঘণ্টার হিসেবটায় ঠিক অভ্যস্ত নই। আমাদের হচ্ছে…বসুন না! একটুক্ষণ বসে যান।’
বদনবাবু বসলেন।
আগন্তুকের গলার স্বর আর চোখের চাহনির মধ্যে কী জানি একটা আছে যার জন্য বদনবাবু তাঁর অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারলেন না। মনে মনে ভাবলেন, একেই বোধহয় বলে হিপ্নটিজম।
আগন্তুক বললেন, আমি যাকে-তাকে আমার পাশে বসতে বলি না। আপনাকে দেখে মনে হল আপনি ভাবুক লোক। কেবলমাত্র টাকা-আনা-পাই-এর হিসেব নিয়ে পৃথিবীর মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকেন না, যেমন আর নিরানব্বই পয়েন্ট নাইন রেকারিং পারসেন্ট লোকে থাকে।…কেমন, ঠিক বলিনি?’
বদনবাবু আমতা-আমতা করে বললেন, ‘আজ্ঞে মানে..’
আপনি বিনয়ীও বটে! সেও ভাল। বড়াই আমি পছন্দ করি না। বড়াই করতে চাইলে আমার চেয়ে বেশি কেউ করতে পারত না।
আগন্তুক থামলেন। তারপর কান থেকে নল দুটো খুলে যন্ত্রটা পাশে বেঞ্চির উপর রেখে বললেন, ভয় হয়। অন্ধকারে অসাবধানে সুইচে হাত পড়ে গেলেই কেলেঙ্কারি।
বদনবাবুর ঠোঁটের ডগায় একটা প্রশ্ন এসে আটকে ছিল, এবার বেরিয়ে পড়ল। —
‘আপনার ও যন্ত্রটা কি স্টেথোস্কোপ, না অন্য কিছু?’
ভদ্রলোক প্রশ্নটা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে গেলেন। ভারী অভদ্র তো! উত্তরের বদলে একটা অবান্তর প্রশ্ন করে বসলেন, আপনি লেখেন?
‘লিখি মানে–গল্প?’
‘গল্প হোক, প্রবন্ধ হোক, যা-ই থোক। ব্যাপারটা হচ্ছে, ও জিনিসটা আমার ঠিক আসে না। অথচ এতসব কীর্তি, এত অভিজ্ঞতা, এত গবেষণা–এগুলো সব ভবিষ্যতের জন্য লিখে যেতে পারলে ভাল হত।’
অভিজ্ঞতা? গবেষণা? লোকটা বলে কী?
‘পর্যটক ক’রকম দেখেছেন?’
লোকটার প্রশ্নগুলোর সত্যিই কোনও মাথামুণ্ড নেই। পর্যটক একটা দেখবারই বা সৌভাগ্য কতজনের হয়?
বদনবাবু বললেন, পর্যটক যে একরকমের বেশি হয় তাই তো জানতাম না।
‘সে কী! তিনরকম যে-কেউ বলতে পারে। জলচর, স্থলচর আর ব্যোমচর। প্রথম দলে ভাস্কো-ডা-গামা, ক্যাপ্টেন স্কট, কলম্বাস ইত্যাদি। স্থলে হিউয়েন সাং, মাঙ্গো পার্ক, লিভিংস্টোন, মায় আমাদের গ্লোব ট্রটার উমেশ ভটচায পর্যন্ত। আর আকাশেধরুন, প্রফেসর পিকার্ড, যিনি বেলুনে পঞ্চাশ হাজার ফুট উঠেছিলেন, আর এই সেদিনের ছোঁকরা গাগারিন। অবিশ্যি এগুলো সবই খুব মামুলি। আমি যে ধরনের পর্যটকের কথা বলছি সেটা জলেও নয়, মাটিতেও নয়, আকাশেও নয়।’
‘তবে?’
‘কালে!’
‘মানে?’
‘কালের মধ্যে ঘোরাফেরা। অতীত কালে পাড়ি, আগামী কালে সফর। ইচ্ছেমতো ভূত ভবিষ্যতে বিচরণ। বর্তমানে তো আছিই, তাই ওটা নিয়ে আর মাথা ঘামাই না।’
এতক্ষণে বদনবাবুর কাছে ব্যাপারটা পরিষ্কার হল। বললেন, এইচ. জি. ওয়েস-এর কথা বলছেন ত? টাইম মেশিন? সেই যে একটা সাইকেলের মতো জিনিসে চেপে একটা হ্যান্ডেল টানলেই অতীত যুগে, আর আরেকটা টানলেই ভবিষ্যতে চলে যায়? সেই যে-গল্পটা নিয়ে একটা বিলিতি বায়োস্কোপ হয়েছিল?
ভদ্রলোক একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললেন, ‘সে তো গল্প। আমি বলছি সত্যি ঘটনা। আমার ঘটনা। আমার অভিজ্ঞতা। আমার মেশিন। কোনও সাহেব-লিখিয়ের মনগড়া গাঁজাখুরি গল্প নয়।
কোথায় যেন একটা স্টিমারের ভোঁ বেজে উঠল।
বদনবাবু ঈষৎ চমকে হাত দুটোকে চাদরের ভিতর ঢুকিয়ে জড়সড় হয়ে বসলেন। কিছুক্ষণ বাদে নৌকোর বাতিগুলো ছাড়া আর কিছু দেখা যাবে না।
ঘনায়মান অন্ধকারে আরেকবার আগন্তুকের মুখের দিকে চাইলেন বদনবাবু। সন্ধ্যার আকাশের শেষ রঙটুকু তাঁর চোখের মণিতে।
আগন্তুক আকাশের দিকে মুখটা তুলে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, ‘হাসি পায়। তিনশো বছর আগে, এইখানে, ঠিক এই বেঞ্চিটার জায়গায়, একটা কুমির ও তার মাথার উপর একটি বক বসে রোদ পোহাচ্ছিল। ওই খড়ের নৌকোটার জায়গায় একটা পাল-তোলা ওলন্দাজ জাহাজের ডেক থেকে এক নাবিক একটি গাদা বন্দুক দিয়ে কুমিরটাকে মারে। এক গুলিতেই কুমির শেষ। বকটি ঝটপটিয়ে উড়ে পালাবার সময় তার একটি পালক খসে আমার পায়ের সামনে পড়ে। এই সেই পালক।’
আগন্তুক থলির ভিতর থেকে একটা ধবধবে সাদা পালক বার করে বনবাবুর হাতে দিলেন।
‘লাল ছিটেফোঁটাগুলো কী?’
বদনবাবুর গলা ধরে এসেছে।
আগন্তুক বললেন, ‘কুমিরের রক্ত খানিকটা ছিটকে বকটার গায়ে পড়েছিল।’
বদনবাবু পালকটা ফেরত দিয়ে দিলেন।
আগন্তুকের চোখের আলো মিলিয়ে আসছে। গঙ্গার স্রোতে কচুরিপানা ভেসে যাচ্ছিল। এখন আর প্রায় দেখা যায় না। জল মাটি আকাশ সব ঘোলাটে একাকার হয়ে আসছে।
‘এটা বুঝতে পারছেন কী জিনিস?’
বদনবাবু হাতে নিয়ে দেখলেন–একটা লোহার ছোট্ট তিনকোনা ফলক, মাথাটা ছুঁচলো।
আগন্তুক বললেন, ‘দু’ হাজার বছর আগে, নদীর মাঝামাঝি–ওই বয়াটার কাছ দিয়ে একটা কমুখো জাহাজ বাহারের ফুলকাটা পাল তুলে সমুদ্রের দিকে চলেছে। সওদাগরি জাহাজ বোধহয়। বলিদ্বীপ-টলিদ্বীপ কোথাও বাণিজ্য করতে চলেছে। পশ্চিমের বাতাসে বত্রিশ দাঁড়ের ছপছপানি শুনতে পাচ্ছি এইখান থেকে।’
‘আপনি?’
‘হ্যাঁ। আমি না তো কে? এইখানে–ঠিক এই বেঞ্চিটার জায়গায়–একটা বটগাছের পাশে লুকিয়ে আছি।’
‘লুকিয়ে কেন?’
‘বাধ্য হয়ে। এত বিপদসঙ্কুল জায়গা, তা তো জানা ছিল না। ইতিহাসের পাতায় তো আর এসব লেখেনি।’
‘বাঘটাঘের কথা বলছেন?’
‘বাঘের বাড়া। মানুষ। আমার এই কোমর অবধি উঁচু নাকথ্যাবড়া মিশকালো বন্য মানুষ। কানে কড়ি, নাকে আংটা, গায়ে উলকি। হাতে তীরধনুক। তীরের ডগায় বিষাক্ত ফলা।’
‘বলেন কী?’
‘ঠিকই বলছি। একবর্ণ মিথ্যে নেই।’
‘আপনি দেখলেন?’
‘শুনুন না! বোশেখ মাস। ঝড় উঠল। আদিম ঝড়। এমন ঝড় আর ওঠে না। সেই মকরমুখো জাহাজ চোখের সামনে জলের তলায় তলিয়ে গেল।’
‘তারপর?’
‘তার থেকে একটি লোক ভাঙা তক্তায় চেপে হাঙর কুমিরের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে কপালজোরে ডাঙায় এসে–ওরে বাব্বা!…’
‘কী?’
‘সেই বন্য মানুষ তার কী দশা করল সে আপনি নিজের চোখে না দেখলে…অবিশ্যি আমিও শেষ পর্যন্ত দেখতে পারিনি। একটা তীর বটের গুঁড়িটায় এসে বিধেছিল। সেইটেকে নিয়ে সুইচ টিপে বর্তমানে ফিরে আসি।’
বদনবাবু হাসবেন, না কাঁদবেন, না অবাক হবেন, তা বুঝতে পারলেন না। ওই সামান্য যন্ত্র আর ওই দুটো নলের মধ্যে এত জাদু আছে নাকি? এও কি সম্ভব?
আগন্তুক বদনবাবুর মনের প্রশ্নটা হয়তো আন্দাজ করেই বললেন, এই যে দেখছেন যন্ত্রটি কানের ভিতর নল দুটো ঢুকিয়ে এই ডান দিকের সুইচ টিপলেই ভবিষ্যতে, আর বাঁ দিকের টিপলেই অতীতে চলে যাওয়া যায়। কোন যুগের কোন সময়টিতে যেতে চান সেটাও এই দাগকাটা সন-লেখা চাকার উপর কাঁটা ঘুরিয়ে ঠিক করে নেওয়া যায়। অবিশ্যি বিশ-ত্রিশ বছর এদিক-ওদিক হয়ে যায় মাঝে মাঝে কিন্তু তাতে বিশেষ এসে যায় না। সস্তার জিনিস তোতাই অত অ্যাকিউরেট নয় আর কি!
‘সস্তা বুঝি?’ এবার বদনবাবু সত্যিই অবাক।
‘সস্তা মানে অবিশ্যি কেবল পয়সার দিক দিয়েই। এর পিছনে রয়েছে পাঁচ হাজার বছরের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, বিদ্যে, বুদ্ধি। আজকাল লোকে ভাবে বিজ্ঞানের যত কারসাজি সবই বুঝি পশ্চিমে, এদেশে আর কী হচ্ছে? আরে বাপু, এদেশে যা হচ্ছে তা কি আর ঢাক পিটিয়ে হচ্ছে? তা হচ্ছে সব গোপনে, অগোচরে, লোকচক্ষুর আড়ালে। নাম জাহির করার ব্যাপারটা আমাদের দেশে কোনওকালেই ছিল না। এখনও নেই। আসল যারা গুণী তাদের হয়তো দেখাই পাবেন না কোনওদিন। দেখুন-না ইতিহাসের দিকে। অজন্তা গুহার ছবি কে বা কারা এঁকেছেন তাঁদের নাম জানেন? হাজার বছরের পুরনো পাহাড়ের গা থেকে খোদা এলোরার মন্দির কে গড়ল তার নাম জানে কেউ? ভৈরবী রাগ কার সৃষ্টি? ঋগ্বেদ লিখল। কে? মহাভারত বেদব্যাসের নামে চলেছে–আর আমরা বলি বাল্মীকির রামায়ণ। কিন্তু এ দুটোর মধ্যে কত শতসহস্র নাম-না-জানা লোকের হাত আছে, মাথা আছে তার হিসেব রাখে কেউ? এই যে পশ্চিমের বৈজ্ঞানিকেরা বড় বড় অঙ্ক কষে ফরমুলা কষে সব বড় বড় আবিষ্কার করে নাম কিনছেন–এই অঙ্কের গোড়ার কথাটা জানেন?’
গোড়ার কথা? কী গোড়ার কথা? বদনবাবু তা জানেন না।
আগন্তুক বললেন, ‘শূন্য।’
‘শূন্য?’
‘শূন্য। Zero।’
বদনবাবু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আকাশপাতাল ভাবতে লাগলেন।
‘ওয়ান টু থ্রি ফোর ফাইভ সিক্স সেভেন এইট নাইন–জিরো। এই দশটার বেশি আর সংখ্যা নেই। শূন্য–অর্থাৎ ফক্কা। অথচ একের পিঠে শূন্য দিলে হল গিয়ে দশ, নয়ের এক বেশি। ম্যাজিক! ভাবলে কূলকিনারা পাবেন না। অথচ আমরা মেনে নিচ্ছি। কেন মানছি তাও বুঝতে পারবেন না। কিন্তু এইনটি সংখ্যা আর শূন্য এই দিয়ে রাজ্যির যত অঙ্ক, যত হিসেব, যত ফরমুলা। যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ ত্রৈরাশিক ভগ্নাংশ ডেসিম্যাল আলজেব্রা এরিথমেটিক ফিজিকস কেমিস্ট্রি অ্যাস্ট্রনমি, মায় অ্যাটম রকেট রিলেটিভিটি–এর একটিও এই দশটি সংখ্যা ছাড়া হবার জো নেই। আর এই সংখ্যা এল কোত্থেকে জানেন? ভারতবর্ষ। এখান থেকে আরবদেশ, আরব থেকে ইউরোপ এবং তারপর সারা পৃথিবী। বুঝেছেন? এর আগে কী ছিল জানেন?’
বদনবাবু আবার ডাইনে-বাঁয়ে মাথা নাড়লেন। সত্যি, তাঁর জ্ঞান কত সীমাবদ্ধ।
আগন্তুক বললেন, “আগে ছিল রোম্যান কায়দা। সংখ্যা নেই। কেবল অক্ষর। এক হল I, দুই হল II, তিন হল III, কিন্তু চার হয়ে গেলে আবার দু’অক্ষর–IV। আর পাঁচ হল এক অক্ষর–V। নিয়মের কোনও মাথামুণ্ড নেই। বাংলায় উনিশশো বাষট্টি লিখতে চার অক্ষর লাগে। আর রোম্যানে কত জানেন?’
‘কত?’
‘সাত। MCMDCII; বুঝলেন কিছু? আটশো আটাশি লিখতে বাংলার তিন অক্ষরের জায়গায় রোম্যানে কত লাগে জানেন! এক ডজন।
DCCCLXXXVIII। এই হারে বিজ্ঞানের বড় বড় ফরমুলা লিখতে বৈজ্ঞানিকদের কী অবস্থা হত ভাবতে পারেন? ত্রিশ পেরোতে না পেরোতে দেখতেন, হয় সব চুল পেকে গেছে, না হয় টাক পড়ে গেছে। আর চাঁদে রকেট পাঠানোর ব্যাপারটা তো নির্ঘাত আরও হাজার বছর পিছিয়ে যেত। ভেবে দেখুন, আমাদেরই দেশের একটি অখ্যাত অজ্ঞাত লোকের আশ্চর্য বুদ্ধির জোরে অঙ্কের ভোল পালটে গেল।’
আগন্তুক দম নেবার জন্য থামলেন।
গির্জার ঘড়ির ঢং ঢং শব্দ ভেসে আসছে। ছ’টা বাজল।
আলো হঠাৎ বাড়ল কেন?
বদনবাবু পুবদিকে চেয়ে দেখলেন গ্র্যান্ড হোটেলের ছাতের পিছন দিয়ে ত্রয়োদশীর চাঁদ উঠেছে।
আগন্তুক বললেন, আগে যেমন, এখনও তাই। দেশে ঢের লোক আছে যাদের নামধাম কেউ জানেও না, জানবেও না; কিন্তু তাদের বিদ্যেবুদ্ধি পশ্চিমের কোনও বৈজ্ঞানিকের চেয়ে একচুল কম নয়। এঁদের সাধারণত কাগজ পেনসিল বইপত্তর ল্যাবরেটরি-ট্যাবরেটরির কোনও দরকার হয় না। এঁরা নিরিবিলি চুপচাপ বসে ভাবেন, আর মাথার মধ্যে ভারী ভারী ফরমুলা কষে ভারী ভারী সমস্যার সমাধান করেন।
আগন্তুক থামতে বদনবাবু মৃদুস্বরে বললেন, আপনি কি তাঁদেরই মধ্যে একজন?
ভদ্রলোক বললেন, ‘না। তবে এমন একজন লোকের সাক্ষাৎ বরাতজোরে একবার আমি পেয়েছিলাম। এখানে নয় অবিশ্যি। এ তল্লাটে নয়। জোয়ান বয়সে পায়ে হেঁটে অনেক ঘুরেছি পাহাড়ে-টাহাড়ে। তাদেরই একটাতে। অসাধারণ পুরুষ। নাম গণিতানন্দ। ইনি অবিশ্যি লিখেই অঙ্ক কষতেন। ইনি যেখানে থাকতেন তার আশেপাশে ত্রিশ মাইলের মধ্যে পাহাড়ের গায়ে যতগুলি পাথরের চাঁই ছিল তার প্রত্যেকটির পা থেকে মাথা অবধি অঙ্কের হিজিবিজিতে ভরা। খড়ি দিয়ে লেখা। তাঁর যিনি গুরু, তাঁর কাছ থেকেই গণিতানন্দ অতীত-ভবিষ্যতে বিচরণের রহস্য জানতে পেরেছিলেন। আমি গণিতানন্দের কাছ থেকেই জেনেছিলুম যে, এভারেস্টের চেয়েও পাঁচ হাজার ফুট উঁচু একটি পাহাড়ের চুড়ো ছিল হিমালয়ে। আজ থেকে সাতচল্লিশ হাজার বছর আগে একটা প্রলয়ংকর ভূমিকম্পে এই পাহাড়ের অর্ধেকটা নাকি মাটির ভিতরে ঢুকে যায়। এবং এই একই ভূমিকম্পে নাকি উত্তর-হিমালয়ের একটি পাহাড়ে ফাটল ধরে তার থেকে একটি ঝরনা বেরিয়ে এই যে নদীটি বয়ে যাচ্ছে আমাদের সামনে দিয়ে, সেটির সৃষ্টি করে।’
আশ্চর্য, আশ্চর্য!
বদনবাবু চাদরের খুঁট দিয়ে কপালের ঘাম মুছে বললেন, আপনার ওই যন্ত্রটি কি তাঁর কাছ থেকেই পাওয়া?
আগন্তুক বললেন, হ্যাঁ। মানে, ঠিক পাওয়া নয়। উনি উপাদান বলে দিয়েছিলেন। আমি সেইসব মালমশলা সংগ্রহ করে যন্ত্রটি নিজেই তৈরি করে নিয়েছি। এই যে নলটা দেখছেন, এটা কিন্তু রবার নয়। এটা একরকম পাহাড়ি গাছের ডাল। এই যন্ত্রের একটি জিনিসের জন্যও আমাকে কোনও দোকানে বা কারিগরের কাছে যেতে হয়নি। এর সমস্তই প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি। ডায়ালটায় দাগ কেটে নম্বর বসিয়েছি আমি নিজে হাতে। তবে, নিজের হাতের তৈরি বলেই হয়তো মাঝে মাঝে বিগড়ে যায়। ভবিষ্যতের সুইচটা তো ক’দিন হল কাজই করছে না।
আপনি ভবিষ্যতে গেছেন?
‘একবারই। তবে বেশি দূরে না। ত্রিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি।’
‘কেমন দেখলেন?’
‘দেখব কী? এইখানে তখন বিরাট রাস্তা আর আমি একমাত্র মানুষ পায়ে হাঁটছি। এক উদ্ভট গাড়ির তলায় পড়তে পড়তে বেঁচে গেসলাম। তারপর আর যাইনি।’
‘অরি অতীতে কতদূর গেছেন?’
‘ওই আরেকটা গোলমাল। আমার এই যন্ত্রে সৃষ্টির গোড়ায় পৌঁছনো যায় না।’
‘বটে?’
‘না। আমি অনেক চেষ্টা করেও সবচেয়ে পিছনে যা গেছি তখন অলরেডি সরীসৃপেরা এসে গেছে।’ বদনবাবুর গলা শুকিয়ে এল। বললেন, কী সরীসৃপ? সাপ…?’
‘আরে না না। সাপ তো ছেলেমানুষ।’
‘তবে?’
‘এই ধরুন, ব্রন্টোসরাস, টিরানোসরাস, ডাইনোসরাস, এইসব আর কি!’
‘তার মানে আপনি কি ওদেশেও গেছেন নাকি?’
‘ওই তো ভুল! ওদেশে কেন? আপনার কি ধারণা এসব জিনিস আমাদের দেশে ছিল না?’
‘ছিল নাকি?’
‘ছিল মানে? এই ঠিক এইখানটাতেই ছিল। এই বেঞ্চির পাশটাতেই।’
বদনবাবুর মেরুদণ্ড দিয়ে একটা শিহরণ খেলে গেল।
আগন্তুক বললেন, ‘গঙ্গা নামেনি তখনও। এইসব জায়গায় তখন ছিল এবড়ো-খেবড়ো পাথরের ঢিপি, আর লতাপাতা গাছপালার জঙ্গল। সে দৃশ্য ভুলব না। ওই জেটির জায়গাটায় একটা শেওলাভরা ডোবা। চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। একটা আলেয়া ধক করে জ্বলে উঠে মিনিটখানেক দুলে দুলে নিভে গেল। তারই আলোয় দেখলাম দুটো ভাঁটার মতো চোখ। চাইনিজ ড্রাগনের ছবি দেখেছেন তো? এও ঠিক তাই। বইয়ে ছবি দেখা ছিল। বুঝলাম এই সেই স্টেগোসরাস। কীসের জানি পাতা চিবুতে চিবুতে জলার উপর দিয়ে ছপছপ করে এগিয়ে আসছে। মানুষ খাবে না জানি, কারণ এরা উদ্ভিদজীবী, কিন্তু তাও দেখি ভয়ে ঢোক গিলতে পারছি না। বর্তমানে ফিরে আসার সুইচটা টিপতে যাব, এমন সময় আমার মাথার উপর হঠাৎ একটা ঝটাপট শব্দ শুনে চমকে চেয়ে দেখি একটা টেরোড্যাকটিল–সে না পাখি, না জানোয়ার, না বাদুড়-জন্তুটার দিকে গোঁত খেয়ে ধাওয়া করে গেল। এ আক্রোশের কারণ বুঝলাম হঠাৎ আমার পাশেই পাথরের ঢিবিটার দিকে চোখ পড়াতে। পাথরের গায়ে একটা বেশ বড় ফাটলে দেখি একটা সাদা গোল চকচকে ডিম। টেরোড্যাকটিলের ডিম। দেখে ভয়ের মধ্যেও লোভ সামলাতে পারলুম না। ওদিকে লড়াই বেধেছে, আর এদিকে আমি দিব্যি ডিমটি বগলস্থ করে নিয়ে…হেঃ হেঃ হেঃ হেঃ।’
বদনবাবুর কিন্তু হাসি পেল না। গল্পের জগতের বাইরে হয় নাকি এসব?
‘যন্ত্রটা আপনাকে পরীক্ষা করতে দিতাম, কিন্তু—’
বদনবাবুর কপালের শিরা দপদপ করে উঠল। ঢোক গিলে বললেন, ‘কিন্তু কী?’
‘ফল পাবার সম্ভাবনা খুবই কম।‘
‘কে-কেন?’
‘তবু একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। লাভ না-হলেও ক্ষতির সম্ভাবনা তো নেই।’
বদনবাবু গলা বাড়িয়ে দিলেন। জয় মা জগত্তারিণী! নিরাশ কোরো না মা!
আগন্তুক নলের মুখ দুটি বদনবাবুর দু’ কানে গুঁজে দিয়ে সুইচটা টিপে খপ করে তাঁর ডান হাতের কবজিটা ধরে ফেললেন।
‘নাড়িটা দেখতে হবে।’
বদনবাবু বলির পাঁঠার মতো কাঁপতে কাঁপতে মিহি গলায় বললেন, ‘অতীত, না ভবিষ্যৎ?’
আগন্তুক বললেন, অতীত। সিক্স থাউসেন্ড বি. সি. চোখটা চেপে বন্ধ করুন।
বদনবাবু অধীর উৎকণ্ঠায় মিনিটখানেক চোখ বুজে বসে থেকে বললেন, ‘কই, কিছু হচ্ছে না তো।’
আগন্তুক যন্ত্রটা খুলে নিলেন।
হবার সম্ভাবনা ছিল কোটিতে এক।
‘কেন?’
‘আমার মাথার আর আপনার মাথার চুলের সংখ্যা যদি এক হত তা হলেই আপনার ক্ষেত্রে যন্ত্রটা কাজ করত।’
বদনবাবু ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেলেন। হায় হায় হায়! এমন সুযোগটা এভাবে নষ্ট হল?
আগন্তুক আবার থলির ভিতর হাত ঢোকালেন।
চাঁদের আলোয় এখন চারিদিক বেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
‘একবার হাতে নিয়ে দেখতে পারি?’ বদনবাবু কথাটা জিজ্ঞেস করার লোভ সামলাতে পারলেন না।
আগন্তুক সাদা গোল চকচকে জিনিসটা এগিয়ে দিলেন।
বেশ ভারী। আর আশ্চর্য মসৃণ।
‘দিন। এবার উঠতে হয়। রাত হল।‘
বদনবাবু ডিমটা ফিরিয়ে দিলেন। আরও কত অভিজ্ঞতা আছে এঁর কে জানে! বললেন, কাল আবার আসছেন তো এইখানে?
‘দেখি। কাজ তো পড়ে আছে অনেক। বইয়ে লেখা ঐতিহাসিক তথ্যগুলো তো এখনও কিছুই যাচাই করা হয়নি। কলকাতার গোড়াপত্তনের ব্যাপারটাও দেখতে হবে একবার। চার্নক বাবাজিকে নিয়ে বড় বেশি বাড়াবাড়ি করেছে এরা।…আজ আসি। জয় গুরু!
ট্রামে উঠে বদনবাবুকে একটা বাজে অজুহাতে আবার নেমে যেতে হল। কারণ পকেটে হাত দিয়েই তিনি চোখে অন্ধকার দেখলেন। মানিব্যাগটা উধাও।
বাড়ির দিকে হাঁটতে হাঁটতে হাঁটতে মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, বুঝেছি। যখন চোখ বন্ধ করেছিলাম, আর লোকটা হাত ধরল নাড়ি দেখতে…ইস, ছি ছি ছি! কী বেকুবই না বনেছি আজ।
বাড়ি যখন পৌঁছলেন তখন আটটা।
বাবাকে দেখে বিলটুর মুখটা হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল।
এতক্ষণে কিন্তু বনবাবুও অনেকটা হালকা বোধ করছেন।
জামার বোতাম খুলতে খুলতে বললেন, ‘আজ তোকে একটা ভাল গল্প বলব।’
‘সত্যিই তো? অন্যদিনের মতো নয় তো?”
‘না রে! সত্যিই।’
‘কীসের গল্প বাবা?’
‘টেরোড্যাকটিলের ডিম। আর তা ছাড়া আরও অনেক। একদিনে ফুরোবে না।’
সত্যি বলতে কী, বিলটুর খুশির খোরাক আজ একদিনে যত পেয়েছেন তিনি, তার দাম কি অন্তত পঞ্চান্ন টাকা বত্রিশ নয়া পয়সাও হবে না?
সন্দেশ, ফাল্গুন ১৩৬৮